বেহাত হওয়া হাট-বাজারের সরকারি জমি উদ্ধারে তৎপর হল রাজ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি: স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস ও বাম জমানায় রাজ্যের নানা জেলায় ছড়িয়ে থাকা হাট-বাজারের(Rural Markets) সরকারি জমি(Government Land) বেহাত হয়ে গিয়েছে। খাতায় কলমে যা ছিল সরকারি জমি, সেটাই হয়ে গিয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি। বেহাত হয়ে যাওয়া হাট-বাজারের ওই সরকারি জমি উদ্ধার তো দূরঅস্ত, চিহ্নিতকরণের চেষ্টাই পূর্বতন কোনও সরকার করেনি। এবার সেই কঠিন কাজে উদ্যোগী হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব জমির চরিত্র ছিল হাট-বাজার, সেগুলি ব্যক্তিগত রায়তি খতিয়ানের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। অর্থাৎ আদতে যেগুলি সরকারি খাস জমি হিসেবে থাকার কথা, তার বেশিরভাগই সরকারের দখলে নেই। অথচ হাজার হাজার একর এমন জমির চরিত্র কিন্তু বদল করা হয়নি। এটা গাফিলতি? নাকি ইচ্ছাকৃত? স্বার্থন্বেষী কোনও চক্র এর পিছনে নেই তো? নাকি সবটাই সবটাই দফতরের উদাসীনতা? এসব প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকার এখন জমি চিহ্নিতকরণে নেমেছে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাজারহাটের বেহাত হওয়া সরকারি জমি দ্রুত চিহ্নিতকরণ ও তা ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক স্তর থেকে জেলায় জেলায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে সার্কুলার পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, হাট-বাজার চরিত্রের জমির সন্ধান করুন। সেইসব জমি উদ্ধার করতে হবে। এখন কোন জমির কী স্টেটাস? অর্থাৎ রাজ্যজুড়ে সরকারি জমিতে কোথায় কোথায় বাড়িঘর, কারখানা, বা দোকান রয়েছে, চিহ্নিত করতে হবে সবই। দেখতে হবে, কীভাবে জমির হাতবদল হয়েছে। অথবা কোনও জমির একাধিকবার বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও ‘অনিয়ম’ হয়েছে কিনা। হয়ে থাকলে সেটা কাদের হাত ধরে হয়েছে সেটাই খুঁজতে হবে। West Bengal Estate Acquisition Act 1953 অনুযায়ী RS Records-এ অন্তর্ভুক্ত যে সব জমির চরিত্র হাট-বাজার, সেগুলি ব্যক্তিগত মালিকানাহীন অবস্থায় সরকারি খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। অথচ দেখা যাচ্ছে, বহু ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
নবান্ন সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে, হাট-বাজারের চরিত্র সম্বলিত জমি কোন জেলায়, কোন ব্লকে, কোন পঞ্চায়েতে এখনও রায়তি খতিয়ানে থেকে গিয়েছে—অর্থাৎ সরকারি জমির ভোগদখল চলছে, তার তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে প্রতিটি জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের। সেই তালিকা দেখেই শুরু হবে বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারের অভিযান। এ নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা ও চর্চা চলছে জেলা স্তরেও। যদিও রাজ্যের সরকারি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, এই কাজ হতে পারত অনেক আগেই। কিন্তু পূর্বতন সরকারের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। তাই দেখা যাচ্ছে, ১৯৫৫ সাল থেকেই যে সব জমি চরিত্রগতভাবে RS Records বা Revisional Settlement রেকর্ডে হাট-বাজার, সেগুলি যথা সময়ে Land Records’র খাতায় অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি।