২২ ডিসেম্বর ভারত বনধ, কড়া নিরাপত্তার মোড়কে জঙ্গলমহল
নিজস্ব প্রতিনিধি: বিহার ও ঝাড়খণ্ডে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে আগামী ২২ ডিসেম্বর দেশজুড়ে ভারত বন্ধের(Bharat Bandh) ডাক দিয়েছে মাওবাদীরা(Maoists)। এই বন্ধ ঘিরে বাংলার(West Bengal) বুকে অশান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও জঙ্গলমহলে(Junglemahal) মাওবাদীদের কোনও অস্তিত্ব নেই। তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ পার্শ্ববর্তী বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে। কিন্তু সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনী অভিযান চালানোয় মাওবাদীরা এসে বাংলার নানা জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। সেই খবর রাজ্য পুলিশের কানেও গিয়েছে। আর সেই সূত্রেই গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনি(Strong Security) তৈরি করেছে রাজ্য পুলিশ(West Bengal State Police)। বিশেষত ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ী ও ওড়িশা সীমান্তবর্তী নয়াগ্রামের জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় এলাকায় শুরু হয়েছে পুলিশের টহলদারি, রুটমার্চ, নাকা চেকিং। সীমান্তবর্তী এলাকার রাস্তায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গিয়েছে জঙ্গলমহল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন সরকারের সুশাসন এবং উন্নয়ন জঙ্গলমহলের ছবিটাই বদলে দিয়েছে। যে সব যুবক-যুবতীরা বাম জমানায় মাওবাদীদের পাল্লায় পড়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল তাঁরা মমতার জমানায় অস্ত্র ছেড়ে ফিরে এসেছে সমাজের মূল স্রোতে। আর তাতেই মাওবাদীদের সন্ত্রাস থেকে নিস্তার পেয়েছে জঙ্গলমহলবাসী। তবে পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যে তাদের প্রভাব রয়েছে। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর জামবনীর বুড়িশোলের জঙ্গলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মৃত্যু হয় মাওবাদী নেতা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজির। তারপর থেকেই জঙ্গলমহল মাওবাদী শূন্য হয়। তবে ভিন রাজ্যের পুলিশ মাওবাদী দমন বাড়লেই তাঁরা তাড়া খেয়ে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকাকে সেফ জোন হিসেবে ব্যবহার করে। যদিও দীর্ঘ ১০-১১ বছর তাও বন্ধ।
মাওবাদী নাশকতায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, রাজধানী এক্সপ্রেস অবরোধ, সাঁকরাইলের ওসি অপহরণ, শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা, কাঁকড়াঝোড় বন বাংলোয় বিস্ফোরণ এ ধরনের বেশ কয়েকটি বড় নাশকতা চালিয়েছে মাওবাদীরা। অতীতের সেই সমস্ত ঘটনা মনে রেখে, কয়েকদিন আগেই এই নিয়ে Intelligence Bureau বা IB’র গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের প্রশাসনকে। তবে গত ২ ডিসেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর দেশজুড়ে People's Liberation Guerrilla Army বা PLGA সপ্তাহ পালন এ রাজ্যে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি। এমনিতেই অনেক আগে থেকেই জঙ্গলমহলের ৪টি জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। তবে যে কোনও নির্বাচন সামনে এলেই জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার ‘মাওবাদী’ জুজু সামনে আসে। কোনওবারই পুলিশ অভিযান ও তদন্ত চালিয়ে মাওবাদী অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। সামনেই রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। তাই গোটা বিষয়টি নজরে রেখেছে জঙ্গলমহলের ৪টি জেলার পুলিশ ও প্রশাসন।