১১ জন পড়ুয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ৩ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিনিধি: সারা দেশে নিট কেলেঙ্কারি যখন রাজনীতির ময়দানে ঝড় তুলেছে তখন বাংলার(Bengal) বুকে সামনে চলে এসেছে এক নয়া কেলেঙ্কারি। তাঁদের কাছে প্রাইভেট টিউশনে পড়তে যায়নি কলেজের ১১জন পড়ুয়া। আর তাই সেই ১১জন পড়ুয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdwan) জেলার কাটোয়া কলেজের(Katwa Maha Vidyalaya) জুয়োলজি বিভাগের(Department of Zoology) ৩জন অধ্যাপকের(Professor) বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে ১জন পুরুষ, ২জন মহিলা। অভিযুক্ত ৩ অধ্যাপক হলেন কৌশিক সরকার, সুলগ্না মুখোপাধ্যায় ও চন্দ্রাণী দাস। এই তিনজনের নাম করে কলেজ অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু সরকারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ১১জন পড়ুয়া(Students)। যদিও এই ৩জনই এই ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।
ফেল করা ওই ১১জন পড়ুয়াদের অভিযোগ, পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষার আগে থেকেই বিভাগের এই কজন পড়ুয়াদের ওপর রুষ্ট ছিলেন ওই ৩জন অধ্যাপক। কেননা তাঁরা ওই ৩জনের কাছে টিউশানি নিতেন না। ছাত্রদের বক্তব্য, ওই ৩জনের কাছে টিউশানি পড়তে না যাওয়ার পরিণতি যে এরকম হিংসাত্মক ও মারাত্মক হবে তা তাঁরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। পঞ্চম সেমিস্টারে ব্যাক পাওয়া এই ১১ জন পড়ুয়ার আরও অভিযোগ, পরীক্ষার সময়ে ডিউটি না থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার দিন হলে এসে ইনভিসিলেটরের দায়িত্ব সামলানো থেকে শুরু করে ইন্টারনাল পরীক্ষার দিন পরীক্ষা বাতিল করেছেন ওই ৩ অধ্যাপক। আর সেই অভিযোগ তুলেই তাঁরা কাটোয়া কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়েছেন।
এবার কাটোয়া কলেজের জুয়োলজি বিভাগের পরীক্ষা দিয়েছিলেন ১৮ জন ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে ১১ জনই নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে ফেল করেছেন। এর নেপথ্যে ওই ৩ অধ্যাপকের হাত রয়েছে বলেই দাবি পড়ুয়াদের। অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, ‘এখন নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারনালের ১৫ নম্বর এবং হোম সেন্টারে প্র্যাকটিক্যালের ২০ নম্বর-সহ মোট ৩৫ নম্বর কলেজের হাতে থাকে। একটি পেপারে মোট মার্কস থাকে ৩৫ এবং বাইরের সেন্টারে থিওরির ৪০ নম্বর-সহ মোট ৭৫ নম্বর থাকে। এই ৭৫ নম্বরের মধ্যে কেউ ২৬ পেলেই সে ওই বিষয়ে পাশ করে যায়। থিওরিতে শূন্য পেলেও কলেজের হাতে যে ৩৫ নম্বর থাকে তার মধ্যে ২৬ পেলেই পাশ করা যায়। কিন্তু কলেজের হাতে নম্বর থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে।’ ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিহিংসার বশে ফেল করানো হয়েছে।
কাটোয়া কলেজের অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু সরকার এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘এই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে, যদি কলেজের কোনও অধ্যাপক, কলেজ আওয়ার্সে টিউশনি পড়ান, তাহলে তাঁর বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কোন পড়ুয়া কার কাছে টিউশনি পড়বেন এটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। আমরা সমস্ত ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। কলেজের দুটি নির্দিষ্ট কমিটি রয়েছে যারা এই ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে। ওই ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
পড়ুয়াদের অভিযোগ, একজন শিক্ষিকা বাড়িতে টিউশন পড়ান। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন যুক্ত। ছাত্রছাত্রীদের আগেই হুমকি দেওয়া হত যে তাঁদের কাছে টিউশন না পড়লে ফেল করিয়ে দেওয়া হবে। যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে কৌশিক সরকার জানিয়েছেন, ‘আমি বাড়িতে টিউশন পড়াই না। যখন খুশি আমার বাড়িতে এসে যে কেউ দেখতে পারেন। এমনও হতে পারে এমন কেউ টিউশন পড়ান, অথচ তাঁর ছাত্রছাত্রীরা ফেল করেছে। আবার সেই শিক্ষক বা শিক্ষিকা অকৃতকার্যদের এই পরামর্শ দিয়েছেন যাতে কলেজকে চাপ দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া যায়।’