মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খুব শীঘ্রই রাজ্যজুড়ে জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যজুড়ে হিন্দিভাষীদের দাপট আর দাপাদাপি ক্রমশই বেড়ে চলেছে। সকাল সন্ধ্যা উঠতে বসে বাংলা(Bengal) আর বাঙালিকে গাল পাড়া পাবলিকই বাংলায় বসে দুইহাতে কামিয়ে চলেছে। তখন বাংলাকে তাঁদের ঘেন্না লাগে না, খারাপ লাগে না। কিন্তু বাংলা আর বাঙালির উদারতার প্রশ্ন উঠলেই তখন চলে উদ্দাম গালিগালাজ। শুধু তাই নয়, বাংলায় বসে বাঙালির ওপর অত্যাচার করা, হেনস্থা করা ও অপমান করাও যেন তাঁদের স্বভাবসিদ্ধ অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার সেখানেই ধাক্কা দিতে মাঠে নামছে রাজ্য প্রশাসন। নেপথ্যে অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) কড়া নির্দেশ এবং কিছুটা হলেও ‘বাংলা পক্ষ’র(Bangla Pokkho) আন্দোলন। বাংলায় মোদি জমানায় হিন্দিভাষীদের দাপট বেড়েছে বৈ কমেনি। গায়ের জোরে, পয়সার জোরে, তাঁরা এখন বাংলার অনেক কিছুই জবরদখল করে বসে রয়েছে। বঞ্চিত হচ্ছে বাঙালিরা। বাংলার মানুষেরা। এরাই আবার এ রাজ্যে হাত শক্ত করছে গেরুয়া ব্রিগেডের। এবার সেখানেই ধাক্কা দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্ন(Nabanna) সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকালে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন সেখানে তিনি জোর দিয়েছেন জবরদখল উচ্ছেদের দিকে। কলকাতা, হাওড়া, সল্টলেক সহ হুগলি শিল্পাঞ্চল, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এবং রাজ্যের সব পুরসভা ও পুরনিগম এলাকায় ক্রমশই রাস্তাঘাট থেকে ফুটপাত জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। ভিন রাজ্যের হিন্দিভাষীরা সেই সব জবরদখল করছে এই রাজ্যেরই কিছু মানুষের যোগসাজশে। আর তাতে শুধু যে রাজ্য সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে তাই নয়, বাংলা ও বাঙালিরাও ব্যবসার জমি হারাচ্ছে। কাজ হারাচ্ছে। আয় হারাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাজ্যের ভাবমূর্তিও। গতকাল নবান্নের বৈঠকে এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বলেই জানা যাচ্ছে। তিনি সাফ জানিয়েছেন, রাস্তা ঘাট জবরদখল করে যাঁরা বসে পড়ছেন তাঁরা কেউ বাঙালি নন, বাংলার লোকও নন। বাংলার মুখ ঢেকে যাচ্ছে অবাঙালি জবরদখলকারীদের জন্য। যারা বৈধ ভাবে থাকছে না। এতে বাংলার আইডেনটিটি তথা পরিচয় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে যা পারছে লোক এনে বসিয়ে দিচ্ছে। নতুন করে যাদের বসানো হচ্ছে, তারা সব বাইরের লোক। প্রথমে একটা চাল লাগাচ্ছে। তার পর চারটে হকার বসিয়ে দিচ্ছে। একটা ভেন্ডারের ৬টা দোকান। দখল করে নিচ্ছে বাংলাটাকে। রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। রাজ্যের রাজস্ব থেকে ৫টা রাজ্যের লোকের খরচ বইতে হচ্ছে।
এসবের বিহীত চেয়ে আগে থেকেই সরব হয়েছে ‘বাংলা পক্ষ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা শুধু এই সব ঘটনা নিয়ে সরব হওয়াই নয়, বাংলা ও বাঙালির প্রতি কোনও অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার দেখলেই সরব হচ্ছে। মাঠে নেমে প্রতিবাদ করছে। এমনকি বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের আন্দোলনের দরুণ সিদ্ধান্ত পরিবর্তিতও হচ্ছে। আর এভাবে তাঁরা রাজনৈতিক জমিও তৈরি করছে, যা তৃণমূলের কাছেও বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। কিন্তু যে সব বিষয় নিয়ে ‘বাংলা পক্ষ’ সরব হচ্ছে সেই সব বিষয়ের জন্য বাংলাতে যে গেরুয়া ব্রিগেডও জমি ধরে রাখতে পারছে সেটা এবার মুখ্যমন্ত্রীর নজরে পড়েছে। বাংলায় ভিন রাজ্যের হিন্দিভাষীদের দাপট ও জবরদখল নিয়ে যে আমবাঙালির ক্ষোভও বাড়ছে সেটাও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে এসেছে। বাংলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জায়গায় দেশের মধ্যে অগ্রণী। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেই শিল্পকে আরও বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দিতে চাইছেন রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কর্মসংস্থান বাড়লেও সেখানে রাজ্যের যুবক-যুবতীরা কাজ পাচ্ছেন না। সেখানে ঢুকে পড়ছে ভিন্ন রাজ্যের মানুষেরা। ফলে যে উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী কাজ করে চলেছেন তা সফল হচ্ছে না। লাভের গুড় খাচ্ছে ভাজপার ভোটাররা। আর তাই হাতগুটিয়ে বসে থাকতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। খুব দ্রুত রাজ্যের সর্বত্র জবরদখল উচ্ছেদ অভিযানের(Anti Illegal Possession Operation) মাধ্যমেই এই ভিন রাজ্যের মানুষদের দাপট ঠেকিয়ে বাংলা ও বাঙালিদের নিরাপদে রাখতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অভিযান শুরুই হতে চলেছে, ভিন রাজ্যের হকার উচ্ছেদের মধ্যে দিয়েই। মুখ্যমন্ত্রী কার্যত প্রশাসনিক বৈঠকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগে থেকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে নয়, পরিকল্পনা করে এই সব জবরদখল তুলে দিতে হবে। এমন ভাবে তুলে দিতে হবে যাতে আগে থেকে টের না পায়।