রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সরাসরি পাঠাতে হবে স্বাস্থ্যভবনে
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে ২০১১ সালে পরিবর্তনের পরে দেখা যায় যে সব দফতর সব থেকে বেহাল দশায় রয়েছে এবং যে দফতরের পরিষবা ঘিরে আমজনতার বিস্তর অভিযোগ সেই সব দফতরের মধ্যে অন্যতম হল স্বাস্থ্য দফতর(Health Department)। ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) এই দফতরের উন্নয়নে সব থেকে বেশি জোর দেন। কার্যত তার হাত ধরেই বাংলার সব সরকাতি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভোল বদলে গিয়েছে। রাজ্যে তৈরি হয়েছে একের পর এক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তৈরি হয়েছে প্রতি জেলাতে নূন্যতম ১টি করে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এসেছে স্বাস্থ্যসাথী থেকে স্বাস্থ্য ইঙ্গিত। আগে বাংলার মানুষ ভিন রাজ্যে যেতে বাধ্য হতেন চিকিৎসার জন্য। আর এখন বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ থেকে লোকে আসেন বাংলায় চিকিৎসা করাতে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ, নেপাল আর ভূটান থেকেও বাংলায় চিকিৎসা করাতে আসা মানুষের সংখ্যা এখন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। কিন্তু এই সব রোগীদের যাবতীয় তথ্য সব সময় থাকে না হাতের কাছে। সেই অসুবিধা দূর করতে এবার রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সরাসরি স্বাস্থ্যভবনে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলার সরকারিউ চিকিৎসা পরিষেবা ও পরিকাঠামোর বিস্তর উন্নতি ঘটলেও এখনও সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে ঘিরে পরিষেবা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠছে। সেই সব অভিযোগ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সত্যি বলে চিহ্নিত হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে পরিকাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে। তবে এই সব অভিযোগ যাতে আর না ওঠে তার জন্য এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রোগীদের দেওয়া পরিষেবা সরাসরি Monitoring করা শুরু হচ্ছে। আর সেই Monitoring হবে কলকাতার স্বাস্থ্যভবন থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার থেকে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসা মানুষদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সরাসরি চলে আসবে স্বাস্থ্য ভবনে। Outdoor, Indoor ও জরুরি বিভাগের প্রতিটি তথ্যই কম্পিউটারে নথিভুক্ত করা হবে। এর জন্য সব হাসপাতালে নতুন কম্পিউটার বরাদ্দ করা হয়েছে। জরুরি বিভাগ, হাসপাতালের ওয়ার্ড, Outdoor ও ল্যাবে সেই সব কম্পিউটারগুলি বসানো হয়েছে। প্রতিদিন রোগীদের দেওয়া পরিষেবাগুলির তথ্য কম্পিউটারে নথিভুক্ত করা হবে। তারপর সেই সব তথ্য পাঠানো হবে স্বাস্থ্য ভবনে।
রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে নিত্যদিন জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি হয়। সেখানেই সেই তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে। সেখান থেকে ওয়ার্ডে রোগী যাওয়ার পরেও একই কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তদের। চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে এসে রোগীদের কী পরামর্শ দিচ্ছেন, তাও নথিভুক্ত করতে হবে। রোগীদের জন্য দেওয়া ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রীগুলিও কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ হবে প্রতিনিয়ত। সুস্থ হয়ে রোগী ছুটি পেলে সেটারও হিসেব যাবে অনলাইনে। কিছু রোগীর চিকিৎসার জন্য নানারকম পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতালের ল্যাবে রোগীদের কোন কোন পরীক্ষা হচ্ছে, সেগুলিও কম্পিউটারে আপলোড করতে হবে। Outdoor-এ রোগীদের লম্বা লাইন হয়। রোগী দেখে ডাক্তাররা নিজেই কম্পিউটারে তাঁদের E- Prescription লিখবেন। ওই E- Prescription দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাবেন রোগীরা। রোগীদের দেওয়া ওষুধগুলি কম্পিউটারে নথিভুক্ত হবে। প্রতিদিনের হিসেবে E-Office’র মাধ্যমে তথ্যগুলি জমা হবে স্বাস্থ্যভবনে। রাজ্যের শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তারা ওই রিপোর্ট নিজেরাই দেখবেন। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার মান কেমন হচ্ছে তা বুঝতে পারবেন। চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে কোনও রকম ঘাটতি হচ্ছে কি না, সেটাও যাচাই হবে। চিকিৎসকরা সঠিক সময়ে Outdoor-এ বসছেন কি না, তাও জানতে পারবে স্বাস্থ্য দফতর। সেই কারণেই E-Office’র মাধ্যমে হাসপাতালগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।