কেন্দ্রে আটকেছে বরাদ্দ, বাংলায় বন্ধ নিয়োগ, সমস্যায় স্বাস্থ্য পরিষেবা
নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণের শিকার হল বাংলার স্বাস্থ্য পরিষেবা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশন এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন—এই দুই খাতে রাজ্যের(West Bengal) প্রাপ্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সেই টাকা আটকে দিয়েছে মোদি সরকার। টাকা না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেল রাজ্যজুড়ে বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ। থমকে গেল যাবতীয় নতুন সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং Block Primary Health Unit নির্মাণের কাজও। সম্প্রতি এক নির্দেশনামা জারি করে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের(National Health Mission) রাজ্য প্রকল্প অধিকর্তা তথা অন্যতম স্বাস্থ্যসচিব শুভাঞ্জন দাস সব জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে একথা জানিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় রাজ্যের যাবতীয় Urban Primary Health Center এবং Block Primary Health Unit চালু করতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, Medical Technologist সহ অনেক কর্মী প্রয়োজন। এই খাতে রাজ্যের পাওনা ৮০০ কোটিরও বেশি টাকা। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার কারণে মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার অধিকারই ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাঁদের মতে, অনেক জেলায় জনসংখ্যার অনুপাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা কম। বিপদে-আপদে মানুষ মুমূর্ষু রোগী নিয়ে দূরদূরান্তে ছুটতে বাধ্য হন। এই সমস্যা সমাধানে নয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি এবং চালু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। কেন্দ্রের কারণে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের। তাছাড়া, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন খাতে রাজ্যের বকেয়া রয়েছে ১১০০ কোটিরও বেশি টাকা। টাকা বন্ধ করার প্রভাব সরাসরি পড়ছে পরিষেবায়। এমনকী, দৈনন্দিন সরকারি কাজকর্মও করা যাচ্ছে না।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য প্রকল্প অধিকর্তা শুভাঞ্জন দাস যে নির্দেশিকা জারি করেছেন তাতে বলা হয়েছে, আপাতত স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির নতুন ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে গত ৪ ডিসেম্বর আরেকটি নির্দেশিকায় Urban Health and Wellness Center বা রাজ্যের বিভিন্ন পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় গ্রাম ও শহর—দু’জায়গার স্বাস্থ্যক্ষেত্রই সমস্যার মুখে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই দু’টি নির্দেশিকা পরপর জারি হয়। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, ‘দু’মাস হল, টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। চালু প্রকল্পগুলির কাজ আমরা রাজ্যের আর্থিক সহায়তায় এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে বকেয়া না মেটানো হলে মুশকিল। তাই কিছুদিন ধীরে চলতে হচ্ছে।’ এই আবহে রাজ্যের শাসক দলের বক্তব্য, ভোটে জিততে না পেরে বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইছে বিজেপি। ছলে-বলে-কৌশলে এ রাজ্যের উন্নয়নের গতি রোধ করতে চাইছে তারা।