ধর্মতলায় ভিড় দেখে মোটেই খুশি নন অমিত শাহ
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার ধর্মতলার সমাবেশে ভিড় দেখে একেবারেই খুশি নন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাই মাত্র ২৩ মিনিটে বক্তব্য রেখে সভা মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন তিনি। সভা মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ,বাংলার কণ্ঠস্বর কোথায় হারিয়ে গেল? বারবার অমিত শাহ' কে(Amit Sha) বলতে শোনা যায়, জোরে চিৎকার করে বলুন, ভারত মাতার জয়। আবার তাকে বলতে শোনা যায় দুহাত উপরে তুলে চিৎকার করে বলুন 'জয় শ্রীরাম'।কলকাতা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বিজেপির ধর্মতলার সমাবেশে ১০ থেকে ১২ হাজার জনসমাগম ঘটেছে।
অপরদিকে বিজেপি দাবি করেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে, ধর্মতলার সমাবেশকে কেন্দ্র করে। যা পরিসংখ্যানে হিসাব করা যাবে না। বুধবার দুপুর একটা বেজে ৫৪ মিনিটে ধর্মতলায় বিজেপির সভা মঞ্চে আসেন অমিত শাহ। আর সভামঞ্চে ২৩ মিনিটের বক্তব্য রেখে দুপুর ২টো বেজে ৩৪ মিনিটে ৪৮টি গাড়ির কনভয় নিয়ে রওনা দেন রেসকোর্স - এর উদ্দেশ্যে। এদিন রাজ্যের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণে লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে ওঠে। কাশ্মীর থেকে করোনা, চন্দ্রযান থেকে রাম মন্দির সব ইস্যু উঠে আসে তার ভাষণে।ধর্মতলার মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে অমিত শা' র মন্তব্য, ২৪ সালে মোদীজিকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে কি হবে না?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য, যদি মোদীজিকে প্রধানমন্ত্রী(PM) আবার বানাতে চান তাহলে তার সঙ্গে জোর গলায় বলতে হবে ভারত মাতা কি... জয় । বক্তব্যের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ ও আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করে প্রণাম জানান অমিত শাহ। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে তিনি এই ধর্মতলাতে এসে বাংলা থেকে তৃণমূলকে হটানোর ধ্বনি তুলেছিলেন। ভারতের জনগণ বিজেপিকে দু কোটি ৩০লক্ষ ভোট দিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীকে(Suvendu Adhikari) বিধানসভা থেকে পরপর দুবার সাসপেন্ড করার বিষয়টি উল্লেখ করে অমিত শা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, আপনি কান খুলে শুনে রাখুন, শুভেন্দু অধিকারীকে আপনি বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করতে পারেন। কিন্তু বাংলার মানুষকে আপনি চুপ করিয়ে রাখতে পারবেন না। বাংলার মানুষ বলছে আপনার সময় সমাপ্ত হয়ে এসেছে। তৃণমূলের সিন্ডিকেট গরিবের কাছে টাকা পৌঁছাতে দিচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যেকে শেষ করে দিয়েছে বলেঅমিত শা বলেন নির্বাচনে যেভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে বা হচ্ছে বাংলায় তা দেশের কোথাও হয় না।
কাটমানিতে গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কত জর্জরিত বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, সিন্ডিকেটের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তিনি গুজরাটের কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনো নেতার ঘরে এত নোটের বান্ডিল কেউ দেখেনি এর আগে। এমন কি তিনি নিজেও দেখেননি। অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন,৬০ কোটি গরিবের জীবনে পরিবর্তন এনেছে মোদি সরকার। সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। করোনার সময় বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসবাদকে খতম করা হয়েছে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারাকে সরানোর জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী জীবন বলিদান দিয়েছিলেন সেই ৩৭০ সমাপ্ত নরেন্দ্র মোদী ঘটিয়েছে বলে অমিত শাহ দাবী করেন। দেশে নতুন সংসদ ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করা উচিত কিনা এই প্রশ্ন তুলে অমিত শাহ অভিযোগ করেন, কংগ্রেস পার্টি আর মমতা ব্যানার্জি এরা সবাই মিলে অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরীর প্রক্রিয়া বন্ধ করে রেখেছিল।
কিন্তু সব বাধা সরিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে অযোধ্যাতে রাম মন্দির হচ্ছে বলে তিনি জানিয়ে দেন।এরপরই জনগণের উদ্দেশ্যে দুহাত তুলে অমিত শাহ স্লোগান দেন, 'জয় শ্রীরাম'। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে 'দিদি' বলে সম্বোধন করে অমিত শা বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মীরা এক একজন ভাইয়ের চেয়ে বড় কার্যকর্তা। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ চ্যাটার্জি ,অনুব্রত মণ্ডল এদের নাম উল্লেখ করে অমিত শা বলেন, এদের মধ্যে কেউ শিক্ষা দুর্নীতি ,কেউ কয়লা কেউ বা গরু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত। অমিত শাহ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, পার্থ চ্যাটার্জি ও অনুব্রত মণ্ডলদের দল থেকে সাসপেন্ড করে বাংলার জনগণকে দেখাক তৃণমূল। তৃণমূল তা কোনদিন পারবে না। অমিত শাহ দাবি করেন সিএএ দেশের আইন। তাই এই আইন বলবৎ করতে কেউ রুখতে পারবে না বলে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নাম করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন পাল্টা। মোদি সরকার পশ্চিমবঙ্গের জন্য কোন কোন খাতে কি কি অর্থ বরাদ্দ করেছে তার খতিয়ান তুলে ধরেন।