পাথর কেটে বাঁশি, তাতেই সুর তুলে বাজিমাত শুশুনিয়ার অভীকের
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাঁশি বাজিয়েই রাধার মন চুরি করেছিলেন কৃষ্ণ। কানাইয়ের বাঁশির সুরে মাতাল হয়েছিল বৃন্দাবন। সেই বাঁশি ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের(Indian Musical Instrument) অন্যতম অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়। এতদিন ধরে সেই বাঁশি তৈরি হতো বিশেষ এক ধরনের বাঁশ কেটে। এখন সেই বাঁশি স্টিল দিয়েও তৈরি হয়। কিন্তু কখনও কী শুনেছেন পাথর কেটে কেউ বাঁশি তৈরি করেছে আর সেই বাঁশিতে রীতিমত সুর তোলা যাচ্ছে? কিন্তু এটাই চূড়ান্ত বাস্তব। আর সেই ঘটনা বাস্তবে রূপ দিয়েছে আমাদের বাংলারই এক ছেলে। নাম তার অভীক কর্মকার। বাঁকুড়া জেলার(Bankura District) শুশুনিয়া পাহাড়ের(Susunia Hill) পাদদেশে বাড়ি তার। সেখানেই সে পাথর কেটে বানিয়ে ফেলেছে এক অপরূপ বাঁশি(Stone Flute)। যা দেখতেও সুন্দর, সুরও তোলে সুন্দর। একটি মাত্র পাথরকে কেটে সেই বাঁশি তৈরি করা হয়েছে আর তার গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অপূর্ব সব কারুকার্য। আর এই কাজের জন্যই অভীক জিতে নিয়েছে ২০২৩-২৪ সালের ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগ অধিকার পশ্চিমবঙ্গ কারুশিল্প প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার। এই বাঁশি তৈরির জন্য রাজ্যস্তরে পুরস্কার পেয়েছে অভীক।
শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে পাথর দিয়ে নানা শিল্পকর্ম তৈরি হয়। সেখানে এখন রীতিমত পাথরের শিল্পীদের গ্রাম তৈরি হয়ে গিয়েছে। অভীকরাও সেখানেই থাকে। যত দিন যাচ্ছে শুশুনিয়ার সেই সব পাথরের কাজ নজর আর কদর দুই টেনে চলেছে গোটা বিশ্ব থেকে। তাদের সেই গ্রামের বহু মানুষ বিভিন্ন ধরনের শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা নানা ধরনের পাথরের মূর্তি তৈরি করেন। অনেকেই রুজি রুটি নির্ভর করে এই পেশার ওপরেই। অভীরও দীর্ঘদিন ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সুরের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তাঁর অমোঘ টান। প্রথমে নিছকই ভাবনা, সেখান থেকে বাস্তবায়নের ঝোঁক। শেষে সুরের প্রতি আবেগকে সম্বল করে বাঁশি তৈরিতে হাত। কিন্তু পাথর খোদাই করে বাঁশি তৈরি তো চাট্টিখানি কথা নয়। তাই বার বার ধাক্কা খেয়েছে সেই প্রয়াস। তবে অভীকও হাল ছেড়ে দেয়নি। বরঞ্চ নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পড়ে থেকেছে সেই বাঁশির পিছনে।
অবশেষে স্বপ্ন হয়েছে সত্যি। তৈরি হয়েছে সুরেলা বাঁশি, তাও পাথরের। অভীকের দাবি, ‘বাঁশি মানেই কৃষ্ণ। আমি কংসের বধ থেকে শুরু করে শ্রী কৃষ্ণের বিভিন্ন অবতার বাঁশিটিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। পাথরের মধ্যেও যে সুর তোলা সম্ভব, আমি মনে করি সেই ভাবনা আসতে পারে একজন শিল্পীর মনেই। তাই পাথর কেটেই বাঁশি বানিয়েছি।’ প্রায় ২১৯ দিন ঘাম ঝরিয়ে এই বাঁশি তৈরি করেছে অভীক। পাথরের তৈরি বাঁশি মানেই তার ওজন অপেক্ষাকৃত বেশি হবে বলেই মনে করা স্বাভাবিক। কিন্তু, এই বাঁশিটির ওজন বেশ হালকা। তার গায়ে খোদাই করা রয়েছে শ্রী কৃষ্ণের জীবনের বেশ কিছু অংশ। এখন রাজ্য সরকারের তরফে পাওয়া স্বীকৃতিতে স্বাভাবিকভাবেই খুশি এই তরুণ শিল্পী। গর্বিত বাংলার শিল্পীমহলও।