বঙ্গ বিজেপিতে এবার কোনঠাসা করা শুরু সৌমিত্রকে
নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ বিজেপিতে(Bengal BJP) রেকর্ড গড়ে দিয়েছেন তিনি। এখন তিনিই একমাত্র সাংসদ যিনি পর পর ৩ বার সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু তারপরও তাঁর কদর বাড়ছে না পদ্মশিবিরে। আর সেটা আঁচ করেই দিন দুই আগে থেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, দল তাঁকে রাঢ় বাংলার দায়িত্ব না দিলে বা কেন্দ্রে মন্ত্রী না করলে তিনি অন্যরকম কিছু ভাববেন। এমনকি এটাও জানিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তৃণমূলেরও। কিন্তু সেই তৃণমূলের তরফেই খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন গতকালই যে, তাঁরা বিজেপিকে ভাঙাবেন না। অর্থাৎ তৃণমূলে এখনই বিজেপির কাউকে নেওয়া হচ্ছে না। আর তার পর থেকেই তাঁকে অর্থাৎ সৌমিত্র খাঁকে এখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছে কোনঠাসা করারা পালা। শুধু তাই নয়, তৃণমূল(TMC) থেকে এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা যায় কিনা। আর এই বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রেরই(Bishnupur Constituency) সাংসদ সৌমিত্র খাঁ(Soumitra Khan)।
বাংলা থেকে বিজেপি এবার আশানুরূপ ফল করতে না পারলেও বিষ্ণুপুর থেকে আবারও ভোটে জিতেছেন সৌমিত্র খাঁ। আর জিত না জিততেও তিনি বাংলায় বিজেপির ফল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। এমনকি তৃণমূলের জেলাস্তরের লোকেরা তাঁকে ঘাসফুলে যোগ দেওয়ার জন্য যে ডাকাডাকি করছেন, সে কথাও বলেছেন সৌমিত্র। তারপর থেকেই জল্পনা-গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। তবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই ছবি বদলাচ্ছে। একদিকে তৃণমূল নেত্রী যেমন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহুর্তে বিজেপি থেকে তাঁরা কাউকে ভাঙাবেন না, তেমনি সৌমিত্রও ফেসবুকে তৃণমূলে না যাওয়ার বার্তাই দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের রেজাল্ট প্রকাশ্যে আসার পরই মুখ খুলেছিলেন সৌমিত্র খাঁ। দলের একাংশের বিরুদ্ধে যে তাঁর মনে ক্ষোভ রয়েছে, সেটা সৌমিত্রের মন্তব্য থেকেই আভাস মিলেছিল। বলেছিলেন, ‘২৫ জনের যে কোর কমিটি তৈরি হয়েছিল, তার মধ্যে হয়ত ২০ জনই অযোগ্য লোক। যার ফল দল ভোগ করছে।’ সৌমিত্র আরও বলেছিলেন, ‘বাংলার লড়াকু নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে। তাহলে বাংলায় বিজেপি খুব ভাল জায়গায় থাকবে। আর যদি তোষামোদি লিডার দেওয়া হয়, তাহলে জেনে রাখুন আমরা বাংলায় ভাল জায়গায় থাকব না।’
এখন তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যাঁরা মিথ্যে প্রেক্ষাপট তৈরি করে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে জানাতে চাই, আমি ছিলাম পার্লামেন্টের প্রথম নির্বাচিত সদস্য যে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন দলের সমস্ত সাংগঠনিক অবস্থান ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলাম। তারপর থেকে আমি দলের জন্য এক নিষ্ঠাবান কর্মী এবং শ্রী নরেন্দ্র মোদীজীর নির্দেশ ও নেতৃত্বে কাজ করেছি। আমার যোগদানের পর থেকে কিছু জন আমাকে বদনাম করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, যাঁরা পর্দার আড়ালে থেকে এই খেলাটি খেলছেন তাঁদের জন্য আমি বলতে চাই যে, সৌমিত্র খাঁ কখনই বিক্রি হবে না এবং রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত বাংলার মানুষের জন্য লড়াই করে যাবে। আমি বিজেপির সাথে রয়েছি এবং শ্রী নরেন্দ্র মোদীজীর নেতৃত্বে মানুষের সেবা করতে থাকব। যাতে আমরা বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’ তবে ঘটনা হচ্ছে, সৌমিত্র চাইলেও তাঁকে কেন্দ্রে যেমন মন্ত্রী করা হচ্ছে না, তেমনি বঙ্গ বিজেপিতেও তাঁকে আর খুব একটা বেশি কদরও দেওয়া হবে না। কার্যত বিজেপিতে থেকেও কার্যত একঘরে হয়েই থাকতে হবে সৌমিত্রকে।
এদিকে সৌমিত্রের জয় নিয়ে মুখ খুলেছেন সুজাতা মণ্ডলও(Sujata Mondol)। সৌমিত্রের প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা এবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে বিষ্ণুপুরে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটযুদ্ধের জন্য। এখন তিনিও সৌমিত্রের প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘কিছুদিন আগেই সৌমিত্র দাবি করছিলেন বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়ে তিনি বিপুল মার্জিনে জিতবেন। এখন দাবি করছেন তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালে বেশি ভোট পেতেন। তিনি নিজেই জানেন না কখন কী বলছেন। তাই তাঁর কথার জবাব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন মনে করি না। উনি চক্রান্ত করে জিতেছেন, তাও মাত্র ৫৫৬৭ ভোটে। আমি দেশের সবথেকে কম মার্জিনে হেরেছি। মানুষ দু’হাত ভরে ভালোবাসা দিয়েছেন। আমি জীবনে কোনও কিছুই সহজে পাইনি। অনেক লড়াই করতে হয়েছে। আগামীদিনেও করব। যাঁরা আমাকে হারানোর চক্রান্ত করেছে সময় তাঁদের বিচার করবে।’