আস্থা গিয়েছে টলে, ৪ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কোনও দায়িত্ব পেলেন না শুভেন্দু
নিজস্ব প্রতিনিধি: দলের অন্দরে তাঁর কী ছড়ি ঘোরানোর দিন শেষ? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে(Bengal BJP)। তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা ইস্তক তাঁর সব দাবিদাওয়া, আবদার মিটিয়েছেন অমিত শাহ(Amit Shah)। ক্রমশই শাহি সমর্থনের জোরে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গ বিজেপির হর্তাকর্তা বিধাতা। বঙ্গ বিজেপির মুখ। তাঁর প্রতাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সদ্য সদ্য হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে(Loksabha Election 2024) রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪টি কেন্দ্রে তাঁর পছন্দের প্রার্থীদেরই দলের প্রতীকে দাঁড় করিয়েছিলেন শাহ। কিন্তু নিট রেজাল্ট কী এল? দলের আসন কমল আর যারা তেনার পছন্দের প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তাঁদের অধিকাংশই হারলো। তাই আর তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারলেন না খোদ শাহ, দাবি সূত্রের। এমনকি তাঁকে রাজ্যের ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও(Bye Election in 4 Assembly Seats) কোনও দায়িত্বে রাখা হল না। কেননা তিনি আজ অবধি বিজেপিকে বাংলার মাটিতে কোনও নির্বাচনের জয়ের মুখ দেখাতে পারেননি। প্রতিটি নির্বাচনে দল তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছে আর তিনি দলকে পরাজয় উপহার দিয়েছেন। তাই আর নয় কোনও নির্বাচনী দায়িত্ব। হ্যাঁ এটাই বঙ্গ বিজেপিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) অবস্থান।
আগামী ১০ জুলাই বাংলার চার বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে উপনির্বাচন। উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র, দক্ষিণবঙ্গে নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র এবং কলকাতার মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে সেই ভোট হবে। এই ৪ কেন্দ্রের মধ্যে একুশের ভোটে বিজেপি জিতেছিল রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ ও বাগদায়। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও তাঁরা এই ৩ কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। উপনির্বাচনেও তাঁরা এই ৩ আসনে জিততে পারার মতো জায়গাতেই আছে। খালি মানিকতলা কেন্দ্রে তৃণমূল তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। যদিও এটা নিশ্চিত নয় যে, মানিকতলায় তৃণমূলই জিতবে। শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দেখা গিয়েছে প্রায় সব নির্বাচনেই তাঁকে কিছু না কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হলেও, দায়িত্ব প্রদান বন্ধ হয়নি। কিন্তু এখন সেই ছবি বদলে গিয়েছে এবং দ্রুত বদলে যাচ্ছে। যে ৪ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন রয়েছে সেখানে শুভেন্দু কেন, তাঁর শিবিরের কাউকেই কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
৪ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে উপনির্বাচনের কোন আসনে কে দায়িত্বে থাকবেন সেই তালিকা প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, রায়গঞ্জ আসনের দায়িত্বে থাকবেন নিখিল রঞ্জন দে। রানাঘাট দক্ষিণের দায়িত্ব সামলাবেন প্রবাল রাহা। মানিকতলার দায়িত্বে থাকছেন দীপাঞ্জন কুমার গুহ আর বাগদা বিধানসভা উপনির্বাচনের দায়িত্বে থেকবেন কৃষ্ণেন্দু মুখার্জি ও অনল বিশ্বাস। এদের কারোরই তথাকথিত ভাবে শুভেন্দুপন্থী হিসাবে পরিচিতি নেই। আর এই ঘটনাই বলে দিচ্ছে বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দুর একতরফা ভাবে ছড়ি ঘোরানোর দিন শেষ হতে চলেছে। বঙ্গ বিজেপির শুভেন্দু বিরোধীদেরও এমনই অভিমত। গল্প এখানেই শেষ নয়। সূত্রে জানা গিয়েছে, উপনির্বাচনের ৪ কেন্দ্রেই দলের আদি নেতা কর্মীদের প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরা হতে পারে। সেই হিসাবে বাগদায় অমৃতলাল বিশ্বাস, রায়গঞ্জে বাবুলাল বালা, রানাঘাট দক্ষিণে মনোজ বিশ্বাস এবং মানিকতলায় কল্যাণ চৌবের নাম ঘুরছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে।