বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণির যোগদান তৃণমূলে, ধাক্কা পদ্মের
নিজস্ব প্রতিনিধি: তুমি একটা উইকেট নাও, আমিও তোমার একটা উইকেট নেব। সেটাও তোমারই দলের। নীরব ভাবে এই বার্তাই দিয়ে দিল বাংলার(Bengal) শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)। আর সেটাও কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে। তৃণমূলের নেতা তাপস রায় যিনি বরানগরের বিধায়ক, তিনি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। আর সেটাও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে। তার আগে দলের সব পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন। সেই ঘটনার পরে পরেই এদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিজেপিরই এক বিধায়ক(BJP MLA) মুকুটমণি অধিকারী(Mukutmani Adhikari) যোগ দিলেন তৃণমূলে। এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) হাত ধরেই জোড়াফুলে পা রাখেন মুকুটমণি। কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে এদিন তৃণমূলের যে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল, সেই মিছিল শুরুর আগেই সেখানে অভিষেকের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন মুকুটমণি। তারপর অভিষেকের সঙ্গেই মুকুটকে মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায়।
মুকুটমণি ছিলেন সরকারি চিকিৎসক। এই পদে থেকেই তিনি উনিশের লোকসভা নির্বাচনে নদিয়া জেলার রানাঘাট লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু কোনও সরকারি পদে থেকে কোনও নির্বাচনে লড়াই করা যায় না, তাই মুকুটের মনোনয়ন ঘিরে আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত হয়। মুকুট তাঁর চাকরি থেকে পদত্যাগ করার আবেদন জানালেও সরকারি স্তরে তা গৃহীত হয়নি। আর তাই মুকুট বাধ্য হন তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে। সেই জায়গায় প্রার্থী হন সেই সময়কার বিজেপির নদিয়া জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার। সেই ভোটে জগন্নাথ জিতে সাংসদও হন। যদিও মুকুটের অনুগামীদের দাবি, জগন্নাথই কলাকাঠি নেড়ে মুকুটের চাকরি থেকে পদত্যাগের আবেদন গৃহীত হতে দেননি। কার্যত সেই সময় থেকেই মুকুট ও জগন্নাথের ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু। একুশের ভোটের আগে মুকুট সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন এবং তাঁর আবেদন গৃহীত হলে একুশের ভোটে তিনি রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হিসাবেই অবতীর্ণ হন।
সেই ভোটে মুকুট পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ১৯ হাজার ২৬০টি ভোট। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী বর্ণালী দে রায় পান ১ লক্ষ ২ হাজার ৭৪৫ ভোট। অর্থাৎ প্রায় ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন মুকুটমণি। তাঁর লক্ষ্য ছিল এবারের লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট থেকেই বিজেপির প্রার্থী হবেন। কিন্তু মতুয়া হওয়া সত্ত্বেও, মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে মুকুটকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। পরিবর্তে টিকিট দেওয়া হয় জগন্নাথকেই। সেই থেকেই মুকুটের অনুগামীরা প্রকাশ্যেই জগন্নাথের বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেন। এর পরে এদিন দেখা গেল মুকুটের জার্সি বদল। যদি তিনি তৃণমূলে এসে রানাঘাট থেকে জোড়াফুলের প্রার্থী হয়ে যান তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেননা মুকুটের যোগদানে লাভবান হবে তৃণমূলই। কেননা একদিকে মুকুট মতুয়া, অন্যদিকে জগন্নাথের তুলনায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। এই দুইয়ের মিশেলে মুকুটের হাত ধরে রানাঘাটা লোকসভা কেন্দ্র ফের দখল করতে ঝাঁপাবে তৃণমূল।