নিরাপত্তা চেয়ে রাজ্য পুলিশের দ্বারস্থ বিজেপির বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ
নিজস্ব প্রতিনিধি: বেসুরো হয়েছিলেন তিনি বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। এবার তো রীতিমত দলেরই ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধেই তিনি নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। দল তাঁর বিরুদ্ধে এখনই বড় কোনও পদক্ষেপ না করলেও ভোট মিটলেই সেই পথে হাঁটা দেবে সেটা মোটের ওপর পরিষ্কার। এই অবস্থায় তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁকে না জানিয়েই প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। অগ্যতা তাই নিরাপত্তা চেয়ে তাঁকে রাজ্য সরকারের পুলিশের(West Bengal State Police) দ্বারস্থ হতে হল। নজরে দার্জিলিং জেলার(Darjeeling District) কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক(BJP MLA) বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা(Bishnu Prasad Sharma)। নিরাপত্তা চেয়ে তিনি দার্জিলিং জেলা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। জেলার পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি লিখে নিজের জন্য নিরাপত্তা চেয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন উত্তরবঙ্গ সফরে থাকায় দার্জিলিং জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি বিষ্ণুপ্রসাদের। অগত্যা পুলিশ সুপারের দফতরে গিয়ে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়ে চিঠিটি জমা দিয়ে এসেছেন তিনি।
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার(Raju Bista) সঙ্গে সুসম্পর্ক নয় বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার। কার্যত গত বছরের শেষ দিক থেকেই বিষ্ণুপ্রসাদ জানান দিচ্ছিলেন, রাজুকে ফের প্রার্থী করা হলে তিনি রাজুর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হবেন। কিন্তু তাঁর হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে রাজুকেই দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র থেকে ফের টিকিট দিয়েছে বিজেপি। আর তার জেরে বিষ্ণুপ্রসাদও নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে রাজুর বিরুদ্ধে। দুইজনই বিজেপির সদস্য, জনপ্রতিনিধি। কিন্তু পদ্মশিবিরের কেউই তাঁদের বিবাদ মেটাতে পারছে না। এরই মাঝে বিষ্ণুপ্রসাদের কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে দিল্লি। মনে করা হচ্ছে, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ফলস্বরূপ বিষ্ণুর এই সুবিধা প্রত্যাহার করেছে দিল্লি। কিন্তু বিষ্ণুও হাত গুটিয়ে বসে থাকার বান্দা নন। অগত্যা তিনি রাজ্য পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন নিরাপত্তা চেয়ে। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘আচমকা আমার কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বাধ্য হয়েই দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি লিখে নিরাপত্তা বাহিনী দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি।’
বিষ্ণু এটাও জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা পাওয়ার আগে যদি তাঁর ওপর কোনও হামলাবাজির ঘটনা ঘটে তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাজু বিস্তা। বিষ্ণুর দাবি, ‘দার্জিলিং লোকসভার বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায় আমি ভোটের প্রচারে যাচ্ছি। কোনও নিরাপত্তা না থাকায় আমার ওপর যে কোনও সময় আক্রমণ হতে পারে। জানি, আমি নির্দল হয়ে ভোটের লড়াই করতে নেমেছি বলেই আমার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে এই লড়াই আমার একার নয়। দার্জিলিংয়ের বহু মানুষের মনের কথা জেনেই আমার লড়াইয়ে নামা। তাই নিরাপত্তা তুলে নিলেও আমাকে লড়াই থেকে সরানো যাবে না।’ উল্লেখ্য, একুশের ভোটে কার্শিয়াং থেকে জয়ী হওয়ার পরে বিষ্ণুপ্রসাদকে কেন্দ্রের তরফে ‘এক্স’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই বিষ্ণুই ‘সেফটি পিন’ প্রতীক নিয়ে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধেই লড়াই করছেন। দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার বিজেপির এই ‘বিদ্রোহী’ বিধায়কের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন কি না, আপাতত সে দিকেই নজর দার্জিলিংবাসীর। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা ভোট না মিটলে, আদর্শ আচরণবিধি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই নিতে পারবেন না দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ থাকলে তিনি পদক্ষেপ করতে পারবেন।