মুক্তির আগে শিনা বোরার ডকু-সিরিজ দেখবে আদালত, রায় বম্বে হাইকোর্টের
নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের আইনি বিপাকে শিনা বোরার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ডকুসিরিজ। ছবির ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই একের পর এক আইনি সমস্যায় পড়ছে এই ডকু-সিরিজ। CBI এই সিরিজের মুক্তি স্থগিত করার জন্যে আদালতে দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু দিন দুয়েক আগেই মুম্বইয়ের একটি বিশেষ আদালত সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। আগামিকাল নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়ার কথা এই চারপর্বের ডকু-সিরিজ টির। কিন্তু মনে হচ্ছে এক্ষুনি মুক্তি পাবে না এই তথ্যচিত্রটি। বৃহস্পতিবার বম্বে হাইকোর্ট স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সকে 'দ্য ইন্দ্রাণী মুখার্জি স্টোরি: ব্যুরিড ট্রুথ' (The Indrani Mukerjea Story Buried Truth)-এর মুক্তি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে দিয়েছে। হাইকোর্ট আদেশে বলেছে, প্রথমে হাইকোর্ট, সিবিআই এবং আইনজীবীদের সামনে এর বিশেষ স্ক্রিনিং করা উচিত। বিচারপতি রেবতী মোহিতেদের এবং বিচারপতি মঞ্জুশ দেশপান্ডের বেঞ্চ মামলার শুনানি করেছেন। সিবিআই আদালতে বলেছিল যে, এই ওয়েব সিরিজের কারণে আদালতে চলমান মামলা প্রভাবিত হতে পারে। এর আগে, সিবিআই ডকুমেন্টারি সিরিজের মুক্তির উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বোম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বেঞ্চ সিরিজের নির্মাতাদের কাছে জানতে চেয়েছে যে, তারা সিবিআইয়ের জন্য সিরিজের স্ক্রিনিং করতে ইচ্ছুক কিনা। তবে নেটফ্লিক্সের হয়ে সিনিয়র কৌঁসুলি রবি কদম প্রাথমিকভাবে এই মামলার বিরোধিতা করে বলেছিলেন যে, এটি প্রাক-সেন্সরশিপের সমান হবে। এর আগেই সিবিআইয়ের সিরিজের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া উচিত ছিল এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত হয়নি। সাক্ষীদের বক্তব্য এখনও রেকর্ড করা হচ্ছে। আপাততঃ এটি (সিরিজের মুক্তি) এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে ২৯ ফেব্রুয়ারি বিষয়টির পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ডকু-সিরিজটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করা হবে না। সিরিজে ইন্দ্রানীর ছেলে মিখাইল (শীনার ভাই) এবং পিটার মুখোপাধ্যায়-ইন্দ্রানীর মেয়ে বিধি মুখার্জি সহ পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি এখনো রেকর্ড করা হয়নি। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার একটি বিশেষ আদালত সিরিজের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করার পরে তাঁরা হাইকোর্টে যায়। সিবিআই-এর মতে, ট্রায়াল কোর্টে এখনও পর্যন্ত ২৩৭ জনের মধ্যে ৮৯ জন সাক্ষীকে পরীক্ষা করা হয়েছে।
২০১৫ সাল। গোটা দেশকে চমকে দিয়েছিল এক বেসরকারি সংস্থার কর্ণধারের গ্রেফতারি কাণ্ড। অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর মেয়েকেই নাকি হত্যা করেছেন। যার শিনা বোরা (Sheena bora murder case)। নামটা কম-বেশি সবার শোনা! যিনি সম্পর্কে ছিলেন ইন্দ্রানীর বোন। হ্যাঁ, আগে সেটাই সবাই জানতেন। কিন্তু পরে শোনা যায়, ইন্দ্রানী ও তাঁর প্রথম স্বামী সিদ্ধার্থ দাসের সন্তান। ২০০২ সালে দ্বিতীয় স্বামী সঞ্জীবের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে পিটার মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন ইন্দ্রানী। আর তৃতীয় স্বামীর কাছেই মেয়েকে বোন হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন ইন্দ্রানী। আবার পরে শোনা গিয়েছিল, পিটারের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শিনার।
তবে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ২০১২ থেকে, বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন পিটারের ছেলে। বলেন, তাঁর ফোনে শিনার শেষ ম্যাসেজ হল বিচ্ছেদের ম্যাসেজ। সেই সময়, মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ইন্দ্রানী বলেছিলেন, তাঁর মেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছে। পরে ইন্দ্রানীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব এবং বর্তমান স্বামী পিটার স্বীকার করেছিলেন যে, শ্যামবর পিন্টুরাম রাই নামে তাঁদের গাড়ির চালক শিনাকে অপহরণ করে হত্যা করেন এবং পরে প্রমাণ লোপাটের জন্যে শিনাকে পুড়িয়ে দেন। ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায় প্রথম বিচ্ছেদের পর সন্তানদের বাবা-মার কাছে গুয়াহাটিতে রেখে কলকাতায় চলে যান। পরে শিনা ও তাঁর ভাই মামা-মামির কাছে বেড়ে উঠেছেন। এরপর সঞ্জীব খান্নাকে বিয়ে করেন ইন্দ্রানী, তাঁদের ঘরেও একটি মেয়ে রয়েছে বিদ্যা। সেই সম্পর্ক ২০০২ সালে ভেঙে মুম্বই চলে যান ইন্দ্রাণী আর সেখানে পিটারকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর যখন শিনা তাঁর মায়ের সম্পর্কে সব জানতে পারেন, তখন সে মুম্বই যায় আর সেখানে MBA শেষ করেন।আর তৃতীয় স্বামীর কাছে শিনাকে বোন হিসেবে পরিচয় দেন ইন্দ্রাণী, এরপর শিনা রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারে চাকরি নেন। কিন্তু আচমকাই তাঁর দীর্ঘদিন অফিসে না আসার দরুন খোঁজ শুরু হয় শিনার।
তবে তাঁর হত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল ২০১৫ সালে ভিন্ন একটি মামলায় ইন্দ্রাণীর গাড়ির চালক শ্যাম রাইয়ের গ্রেপ্তারির পরে। সে বছরেই শ্যাম রাইয়ের স্বীকারোক্তিতে আগস্ট মাসে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়কে শিনা বোরার খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব ও বর্তমান স্বামী পিটার। ২০১৯ সালে পিটার-ইন্দ্রাণীর ডিভোর্স হয়। ২০২০ সালে পিটার জামিন পান। আর ছয় বছর আন্ডার ট্রায়ালে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান ইন্দ্রাণী জামিন, ২০২২ সালে।