শিনা বোরার হত্যা নিয়ে তথ্যচিত্র আটকানোর দাবি, CBI-এর আর্জি খারিজ
নিজস্ব প্রতিনিধি: দিন কয়েক আগেই মুক্তি পেয়েছেন বহু প্রতীক্ষিত ডকু সিরিজ 'দ্য ইন্দ্রাণী মুখার্জি স্টোরি: ব্যুরিড ট্রুথ'-এর ট্রেলার। চার পর্বের ডকু-সিরিজটিতে উঠে আসবে ২০১৫ সালের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর শীনা বোরা হত্যার ঘটনা। যেটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এই তথ্যচিত্র মুক্তি আটকানোর দাবি নিয়ে আদালতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন CBI। এরপরেই নেটফ্লিক্সকে ছবিটির মুক্তি আটকাতে নোটিশ পাঠিয়েছিলেন বিশেষ আদালতের বিচারক Sp নাইক নিম্বালকর। তবে CBI-এর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত। ২০ ফেব্রুয়ারি ছিল সেই মামলার শুনানি। মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের একটি বিশেষ আদালত শিনা বোরা হত্যা মামলার ডকুমেন্টারি সিরিজ সম্প্রচারে (সিবিআই)-এর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। সিবিআই বিশেষ বিচারক এসপি নায়েক নিম্বলকার বলেছেন যে, আদালতের সম্প্রচার বন্ধ করার "অন্তর্নিহিত ক্ষমতা" নেই, এবং তদন্তকারী সংস্থাকে পরামর্শ দেওয়া হলে উপযুক্ত ফোরামের কাছে যেতে হবে। প্রসিকিউশন এই ধরনের নির্দেশের জন্য কোনো আইনি বিধান তার নজরে আনেনি। পাবলিক প্রসিকিউটর সিজে নান্দোদের মাধ্যমে দায়ের করা তার আবেদনে, সিবিআই আদালতকে "অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং মামলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নেটফ্লিক্স, এর সম্প্রচারের ডকুমেন্টারিতে থাকা/বন্ধ করার জন্য অভিযুক্ত এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নির্দেশ জারি করতে বলেছিলেন। চলমান বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো প্ল্যাটফর্মে এটি মুক্তি দেওয়া যাবেনা সেটাই জানানো হয়েছিল।
২০১৫ সাল। গোটা দেশকে চমকে দিয়েছিল এক বেসরকারি সংস্থার কর্ণধারের গ্রেফতারি কাণ্ড। অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর মেয়েকেই নাকি হত্যা করেছেন। যার শিনা বোরা (Sheena bora murder case)। নামটা কম-বেশি সবার শোনা! যিনি সম্পর্কে ছিলেন ইন্দ্রানীর বোন। হ্যাঁ, আগে সেটাই সবাই জানতেন। কিন্তু পরে শোনা যায়, ইন্দ্রানী ও তাঁর প্রথম স্বামী সিদ্ধার্থ দাসের সন্তান। ২০০২ সালে দ্বিতীয় স্বামী সঞ্জীবের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে পিটার মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন ইন্দ্রানী। আর তৃতীয় স্বামীর কাছেই মেয়েকে বোন হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন ইন্দ্রানী। আবার পরে শোনা গিয়েছিল, পিটারের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শিনার।
তবে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ২০১২ থেকে, বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন পিটারের ছেলে। বলেন, তাঁর ফোনে শিনার শেষ ম্যাসেজ হল বিচ্ছেদের ম্যাসেজ। সেই সময়, মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ইন্দ্রানী বলেছিলেন, তাঁর মেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছে। পরে ইন্দ্রানীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব এবং বর্তমান স্বামী পিটার স্বীকার করেছিলেন যে, শ্যামবর পিন্টুরাম রাই নামে তাঁদের গাড়ির চালক শিনাকে অপহরণ করে হত্যা করেন এবং পরে প্রমাণ লোপাটের জন্যে শিনাকে পুড়িয়ে দেন। ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায় প্রথম বিচ্ছেদের পর সন্তানদের বাবা-মার কাছে গুয়াহাটিতে রেখে কলকাতায় চলে যান। পরে শিনা ও তাঁর ভাই মামা-মামির কাছে বেড়ে উঠেছেন। এরপর সঞ্জীব খান্নাকে বিয়ে করেন ইন্দ্রানী, তাঁদের ঘরেও একটি মেয়ে রয়েছে বিদ্যা। সেই সম্পর্ক ২০০২ সালে ভেঙে মুম্বই চলে যান ইন্দ্রাণী আর সেখানে পিটারকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর যখন শিনা তাঁর মায়ের সম্পর্কে সব জানতে পারেন, তখন সে মুম্বই যায় আর সেখানে MBA শেষ করেন।আর তৃতীয় স্বামীর কাছে শিনাকে বোন হিসেবে পরিচয় দেন ইন্দ্রাণী, এরপর শিনা রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারে চাকরি নেন। কিন্তু আচমকাই তাঁর দীর্ঘদিন অফিসে না আসার দরুন খোঁজ শুরু হয় শিনার।
তবে তাঁর হত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছিল ২০১৫ সালে ভিন্ন একটি মামলায় ইন্দ্রাণীর গাড়ির চালক শ্যাম রাইয়ের গ্রেপ্তারির পরে। সে বছরেই শ্যাম রাইয়ের স্বীকারোক্তিতে আগস্ট মাসে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়কে শিনা বোরার খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিলেন ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব ও বর্তমান স্বামী পিটার। ২০১৯ সালে পিটার-ইন্দ্রাণীর ডিভোর্স হয়। ২০২০ সালে পিটার জামিন পান। আর ছয় বছর আন্ডার ট্রায়ালে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান ইন্দ্রাণী জামিন, ২০২২ সালে। এবার এই ঘটনার কতটা ‘দ্য ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় স্টোরি: বারুট ট্রুথ’ ডকুসিরিজে উঠে আসবে তা জানা যাবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি। বোঝাই যাচ্ছে, সিনেমার থেকেও বেশি চাঞ্চল্যকর হতে পারে এটি। ২০১৫ সালে, তার ২৫ বছর বয়সী কন্যা শীনা বোরাকে হত্যার অভিযোগে INX মিডিয়ার সিইও ইন্দ্রাণী মুখার্জির গ্রেপ্তার করেছিল, জাতি হতবাক হয়েছিল। ২০১২ সালে বোরাকে একটি গাড়িতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী রায়গড় জেলার একটি জঙ্গলে তার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়।ইন্দ্রাণীকে আগস্ট ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ২০২২ সালের মে মাসে জামিন দেওয়া হয়েছিল।মামলার অন্য অভিযুক্ত রাই, খান্না এবং পিটার মুখার্জিও জামিনে রয়েছেন।