নেত্রীর ধমক খেয়ে উপলব্ধি দেবাংশুর, ‘বেইমানি আর অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি’
নিজস্ব প্রতিনিধি: এবারের লোকসভা নির্বাচনে(Loksabha Election 2024) পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Misnapur) জেলার তমলুক লোকসভা কেন্দ্র(Tamluk Constituency) থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) তরফে প্রার্থী করা হয়েছিল দেবাংশু ভট্টাচার্যকে(Debangshu Bhattacharya)। কিন্তু সেই লড়াইয়ে পরাস্ত হয়েছে দেবাংশু। গতকাল অর্থাৎ শনি বিকালে কলকাতার কালিঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসেছিল দলের বিশেষ বৈঠক। সূত্রের দাবি, সেখানেই দলনেত্রীর কাছে ধমক খান দেবাংশু। ভোটের প্রচারের সময়ে দেবাংশুর কিছু কার্যপদ্ধতি পছন্দ হয়নি মমতার। সেই ঘটনা তিনি নাকি দেবাংশুকে সরাসরি জানিয়েও দেন গতকালের বৈঠকে। সেই বৈঠকের পরে এদিন অর্থাৎ রবিবার ফেসবুকে নিজের ভোটে লড়াই করার উপলব্ধির কথা তুলে ধরেছেন দেবাংশু। সেই উপলব্ধিতে বেশ নজর কাড়ছে বেশ কিছু শব্দবন্ধ, যার অন্যতম হল, ‘বেইমানি আর অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি।’
এদিন দেবাংশু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে টয়লেট সেরে, স্নান করে, এক বাটি ছাতুর সরবত খেয়ে রোজ বেরিয়ে পড়তাম সকাল ৮টার মধ্যে। প্রবল রৌদ্রে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রচার চলত। তারপর ঠিকানায় ফিরে একটু গা ধুয়ে, দুপুরের খাওয়া সেরে পুনরায় ৩টে নাগাদ রওনা দিতাম। চলত রাত্রি ৯টা পর্যন্ত.. কখনও কখনও সেটা সাড়ে ১০টাও বাজত। রাতে নিমতৌড়ির বাড়িতে ফিরে খাবার খেয়ে শুরু হত বিভিন্ন নেতা, কর্মীদের সাথে বাড়ির অফিসে অভ্যন্তরীণ মিটিং, কখনও কখনও সেসব মিটিং চলেছে রাত্রি ২টো পর্যন্তও। মিটিং শেষে ঘুমিয়ে আবার পরের দিন সকালে ৬টায় ওঠা। তমলুকের দলীয় কর্মীরা, যারা সেই বাড়িতে প্রায়শই আসতেন তারা সকলেই এই রুটিন জানেন। পরিশ্রমে নিজের ১০১% দিয়েছি। যা করতে পারি তার বেশি করেছি। আমার টিম, আই প্যাকের কয়েকজন এবং পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় উন্মাদের মত পরিশ্রম করেছে। সাথে প্রাণপাত করে দিয়েছেন বুথ স্তরের দলীয় কর্মীরা..নিজেদের সবটা দেওয়ার পরেও বেইমানি আর অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি।’
দেবাংশু আরও লিখেছেন, ‘এত কোটি কোটি টাকার বিরুদ্ধে আমাদের স্বল্প ক্ষমতার লড়াই ব্যর্থ হয়েছে। গোটা জেলায় নেতা-কর্মী নয়, ভোট করিয়েছে কেবল টাকা। সাথে ছিল নন্দীগ্রাম ও ময়নার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত সন্ত্রাস। নির্বাচনের দিন তিনেক আগে থেকে বিরুলিয়া, বয়াল, ভেকুটিয়া, হরিপুর, গোকুলনগরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দিতে না বেরোনোর হুমকি তথা ফতোয়া এবং সোনাচূড়া অঞ্চল জুড়ে ভোটের দিন দেদার ছাপ্পা। ময়নার বাকচা অঞ্চল এতটাই মুক্তাঞ্চল, তৃণমূল নাম উচ্চারিত হলেও মারধর এমনকি প্রাণহানিও সেখানে নতুন নয়। দলের ঝান্ডা বাঁধার লোক অব্ধি সেখানে নেই। তার ওপর নির্বাচনের দিন দুয়েক আগেই সেই খুন; যাকে কেন্দ্রে করে গোটা নন্দীগ্রাম হয়ে উঠেছিল দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। সেই পরিস্থিতে সবটা এতটা একপেশে হয়ে গিয়েছিল, এক সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল এই নির্বাচন এখন লড়া, না লড়া সমান ব্যাপার। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি! পরিস্থিতির সুযোগে আমার বিপরীতের প্রার্থী আধা বেলা প্রচার না করেও জিতে গিয়েছেন.. আর আমি পাগলের মত বুথ বুথ ঘুরেও জিততে পারিনি।’
দেবাংশু দলের সাংগঠনিক হাল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কিছুটা ঘুরিয়ে। জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনী ক্ষেত্রে যখন প্রথম পৌঁছলাম, সাংগঠনিক পরিস্থিতি দেখে চমকে গিয়েছিলাম! মনে হয়েছিল, হঠাৎ করে কোনও অগ্নিকুণ্ডে এসে পড়েছি বোধহয়.. আরও অনেক মানুষ চেনা, অনেক রকমারি অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে শেষ আড়াই মাস ভিমড়ি খেয়েছি প্রচুর, প্রকাশ্যে সবটা লিখতে কিংবা বলতে চাই না। মার্চে ওজন ছিল ৮৩ কিলো। যা আজ কমে ৭৭.. সৌজন্যে শেষ আড়াই মাস। এই ৬ কিলো ওজনের বিনিময়ে ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, আশীর্বাদ পেয়েছি। সেটাই আমার কাছে এই নির্বাচনের নির্যাস.. আগামী দিনে এই রাজনৈতিক নদী পথ আমায় কোন মোহনায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে জানিনা.. শুধু এটুকু জানি, আমার নৌকো খোয়া গেছে, কেবল নিজেকে ভাসিয়ে, বাঁচিয়ে রেখেছি এই অগাধ জলরাশির পৃষ্ঠ দেশে।’