For the best experience, open
https://m.eimuhurte.com
on your mobile browser.
OthersWeb Stories খেলা ছবিঘরতৃণমূলে ফিরলেন অর্জুন সিংবাংলাদেশপ্রযুক্তি-বাণিজ্যদেশকলকাতাকৃষিকাজ বিনোদন শিক্ষা - কর্মসংস্থান শারদোৎসব লাইফস্টাইলরাশিফলরান্নাবান্না রাজ্য বিবিধ আন্তর্জাতিককরোনাএকুশে জুলাইআলোকপাতঅন্য খবর
Advertisement

তিস্তার জলস্ফীতিতে ধ্বংসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে, সাবধান না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে

আরও বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে সিকিম আর বাংলার জন্য। অপেক্ষা শুধু অমোঘ সময়ের। তাণ্ডবলীলা চালাতে পারে তিস্তা। সতর্ক না হলেই বিপদ।
04:38 PM Jun 16, 2024 IST | Koushik Dey Sarkar
তিস্তার জলস্ফীতিতে ধ্বংসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে  সাবধান না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে
Courtesy - Google
Advertisement

নিজস্ব প্রতিনিধি: রবি সকালে অনেকটাই জল কমেছে তিস্তার(Teesta) বুকে। কার্যত সে এবার স্বাভাবিক হওয়ার পথেই ফিরছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঘটনা যে, গত বছর থেকে তিস্তার জলস্ফীতিতে ধ্বংসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে সিকিম(Sikkim) থেকে বাংলার(Bengal) কালিম্পং জেলার একাংশে। প্রভাব পড়ছে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলাতেও। সেই প্রেক্ষাপটে এবার নদী বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রকৃতির কারণে তিস্তা এমনিই বদলাচ্ছে, তার ওপরে অএই নদীকে ঘিরে মানুষের ‘কার্যকলাপ’ তিস্তার পারের বৃত্তান্ত দ্রুতই পাল্টে দিচ্ছে। এখনই সাবধান না হলে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়(Disaster) অপেক্ষা করছে সিকিম আর বাংলার জন্য। কেননা তাঁদের আশঙ্কা, যেভাবে সিকিমে যথেচ্ছ ভাবে জলাধার দিয়ে তিস্তাকে বেঁধে রাখা হচ্ছে তার জেরে আজ না হোক কাল সে সেই বাঁধন ছিঁড়ে বার হয়ে আসতে চাইবেই। তিস্তা এখন থেকেই বার বার সেই সঙ্কেত দিচ্ছে। সে শুধু অপেক্ষা করছে অমোঘ সময়ের জন্য। সেই সময় এলেই তাণ্ড চালাবে সে। এই মতের সঙ্গে একমত রাজ্যের বিশিষ্ট পরিবেশদিন সুভাষ দত্ত(Subhash Dutta)-ও।  

Advertisement

গত বছর অক্টোবর মাসে সিকিমে অক্টোবরে লোনাক হ্রদের বিস্ফোরণের জেরে হড়পা বানে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল সিকিমের পাশাপাশি বাংলার কালিম্পং জেলাও। নদী বিশেষজ্ঞদের দাবি, সিকিম থেকে কালিম্পং অবধি তিস্তা ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। তিস্তার নদীখাত দিনের পর দিন উঁচু হয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় বালি, পাথর, নুড়ি থেকে বড় পাথর নদীর উপরিভাগ থেকে নেমে আসছে। বৃষ্টি, হড়পাবান বা কোনও জলস্ফীতি হলে আছড়ে পড়ছে নদীর দু’পাশে। রাস্তা, সেতু, জঙ্গল, পাহাড় চলে যাচ্ছে তিস্তাগর্ভে। আর এর জন্য দায়ী তিস্তার পাড়ে মানুষের অবৈধ অবৈজ্ঞানিক ‘কার্যকলাপ’। এটা ভুললে চলবে না, গোটা বিশ্বে সব থেকে নবীন ভঙ্গিল পর্বত হচ্ছে হিমালয় যার গঠন এখনও চলেছে। সেই হিমালয় থেকে উৎপত্তি হওয়া যাবতীয় নদী বিভিন্ন সময়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে এটা ধরে নিতেই হবে। আর তাই সেই সব নদীতে বাঁধ দেওয়া বা তার দুইপাশে মানুষের যাবতীয় নির্মাণ বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কিন্তু তিস্তার হিমালয়ের হিমবাহ থেকে উৎপত্তি হলেও তার ক্ষেত্রে কার্যত কোনও নিয়মই মানা হয়নি।

Advertisement

নদী বিশেষজ্ঞদের আরও দাবি, সব নদীর একটা বিপজ্জনক এলাকা থাকে। তিস্তার সেই জায়গা ক্রমেই দখল হয়ে জনবসতি হচ্ছে। পাহাড় থেকে সমতল, তিস্তাখাতের একাংশ দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে নদীর জল বাড়লেই ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। রংপোর একটি এলাকায় গত বছর তিস্তার জলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে অংশে সেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আসলে নদীখাতের অংশ। সেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। আগামী দিনে সেই সব এলাকায় কিন্তু বিপর্যয় ধেয়ে আসবে। এ রাজ্যের প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তিস্তার সংরক্ষিত এলাকা, নদীখাত থেকে শুরু করে দু’পারের একাধিক কর্মকাণ্ড তিস্তার আশেপাশের এলাকাকে খুবই ‘স্পর্শকাতর’ করে তুলেছে। তিস্তা সিকিমে ১৭০ এবং পশ্চিমবঙ্গে ১২৩ কিলোমিটার এলাকা ধরে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলার বুকে তিস্তার ওপর গজলডোবা ভিন্ন কোনও বাঁধ করা হয়নি। কিন্তু সিকিমে সেই তিস্তার ওপরে ৪৭টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিস্তাকে পাশে রেখে জাতীয় সড়কে সারা বছর পাহাড় কাটার কাজ চলছে। একের পর এক বিদ্যুৎ প্রকল্প, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, জলাধারের জল আটকের জেরে নদীর স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়েছে। সেবক-রংপো রেল প্রকল্পে ১৪টি বিরাট সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। সেখানে ডিনামাইট দিয়ে পাহাড়ে সুড়ঙ্গ করায় এলাকা ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে। তাতেও প্রভাব পড়েছে তিস্তায়। এক দিনে এই পরিস্থিতি হয়নি।

নদী বিশেষজ্ঞদের দাবি, সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যারাজের আগে জল ধরে রাখা হচ্ছে। সেখানে পলি জমে ক্রমেই তিস্তার খাতের গভীরতা কমছে। সেই পলি কার্যত পরিষ্কারই হয় না। গত বছর অক্টোবরে লোনাক হ্রদের জলোচ্ছ্বাসের বিপর্যয়ে বিপুল পলি ও অন্য সামগ্রী তিস্তার খাতে জমা হয়েছে। পাহাড় থেকে সমতল বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তা জমেছে। নদীখাত উঁচু হয়ে উঠে আসায় নদীর জল ধারণ ক্ষমতা আরও কমেছে। আরও দু’টি বিষয় শঙ্কা বাড়িয়েছে। গাছ থাকলে বাড়ে মাটির জলধারণ ক্ষমতা। পাহাড়ে সবুজ কমায় মাটির সেই ক্ষমতা কমছে। বৃষ্টি হলে দ্রুত আশেপাশের বড় এলাকার জল চলে আসছে তিস্তার খাতে। সেই কারণেই সেবক-রংপো রেলপথও এই অঞ্চলে কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু সেই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের প্রচুর সামগ্রী নদীখাতে পড়ছে। কোথাও নদীর ধার ঘেঁষে সে সব কংক্রিট স্তূপাকারে জমা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত-ও জানিয়েছেন ও মানছেন, ‘তিস্তা আমাদের ধ্বংস করছে না। আমরাই তিস্তাকে ধ্বংস করছি আর পক্ষান্তরে নিজেদের জন্য আরও বড় ধ্বংসের জমি তৈরি করছি। অবৈধ নির্মাণ, যথেচ্ছ জলাধার দিয়ে তিস্তাকে বাঁধতে চাইছি। সেই বাঁধন ছিঁড়ে তিস্তা বার হবে। এখন সাবধান না হলে ক্ষতি হতে পারে।’

Advertisement
Tags :
Advertisement