মমতার দেখানো পথেই হাঁটা দেবেন দিলীপ, জল্পনা অনুগামীদের
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজনীতি কী শুধুই শাসক বনাম বিরোধীদের হয়ে থাকে। না বোধহয়। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের অন্দরেও চলতে থাকে গোষ্ঠী রাজনীতি। একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা, অপরকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা। এই কদর্য রাজনীতির শিকার হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) কংগ্রেস ছেড়ে তৈরি করেন তৃণমূল(TMC)। আর তারপর থেকেই ক্রমশ সাইন বোর্ড সর্বস্ব দলে পরিণত হতে শুরু করে দেয় কংগ্রেস। আর এখন তো রাজ্য বিধানসভা থেকেও তাঁরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। মমতা কিন্তু তৃণমূল গড়ার ১৩ বছরের মধ্যেই রাজ্যের(Bengal) ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন দলকে। এবার হয়তো তাঁর পথেই হাঁটতে দেখা যাবে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি কিন্তু দলের আদি নেতাকর্মীদের কাছে সব থেকে জনপ্রিয় নেতা দিলীপ ঘোষকেও। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে রীতিমত জল্পনা ছড়িয়েছে দল দিলীপকে যোগ্য সম্মাণ ও পদ না দিলে তিনি হয়তো বিজেপি ছাড়বেন। সেই সঙ্গে নিজস্ব দল গড়ে তুলবেন। আর সেই দল হবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে দিলীপ(Dilip Ghosh) বঙ্গ বিজেপির সফলতম সভাপতি। তাঁর আমলেই বঙ্গ বিজেপি(BJP) বাংলার মাটিতে সর্বোচ্চ সাংসদ সংখ্যার মুখ দেখেছে। ১৮জন, সেই জয় এসেছিল ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে। দিলীপের হাত ধরেই বাংলার বিধানসভায় সব থেকে বেশি সংখ্যক বিধায়ক পা রাখতে পেরেছেন। ৭৭জন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সাফল্য এসেছে। কিন্তু তারপরে পরেই দিলীপকে সরিয়ে দেওয়া হয় বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদ থেকে। কিন্তু এটাও সত্য, দিলীপের সাফল্যকে আর কোনও বিজেপি নেতাই ছাপিয়ে যেতে পারেননি। কার্যত কংগ্রেসে থাকাকালীন মমতার যে জনপ্রিয়তা ছিল, সেই উচ্চতার সমান না হলেও বিজেপির আদি নেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় দিলীপ। অথচ সেই দিলীপকেই কিনা চূড়ান্ত হেনস্থা ও অপমান করে চলেছে পদ্মশিবির। দীর্ঘদিন তাঁকে পদহীন করে রাখা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে তাঁর জেতা কেন্দ্র থেকেই লড়তে দেওয়া হয়নি। মধ্য কলকাতায় বিজেপির পুরাতন রাজ্য কার্যালয়ে তাঁর ঘরটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ডাকা হয়না দলের সব বৈঠকেও। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, আর কত অপমান সহ্য করবেন বঙ্গ বিজেপির সফলতম প্রাক্তন সভাপতি।
আর এখানেই নীরবতা ভেঙেছেন দিলীপ। জানিয়েছেন, ‘সংগঠনের নির্দেশেই বিজেপিতে এসেছিলাম। সংগঠন মজবুত করা, প্রধান বিরোধী দল করার কাজ হয়ে গিয়েছে। দলে এখন অনেক যোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁরা সামলাবেন। আমি এ ভাবে থাকতে পারব না। আমার জন্য নির্দিষ্ট কাজ না থাকলে রাজনীতিকে টা-টা, বাই-বাই বলে দেব। আমি অন্য কারও মতো ‘প্রাক্তন’ পরিচয় নিয়ে কাজ করতে পারব না। যত ক্ষণ দলে রয়েছি, তত ক্ষণ কাজ করে গেলেও একটা সময়ের পরে তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। রাজনীতি ছাড়াও সমাজের অনেক কাজ রয়েছে। আরও কিছু দিন অপেক্ষা করব। দলের পক্ষে কিছু জানানো হয় কি না, তার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে কাজ করে যাচ্ছি। আজও আমার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে অপেক্ষার তো একটা সীমা থাকে! যাদের বলা দরকার, তাঁদের বলে দিয়েছি। আমি এ ভাবে কাজ করতে পারব না। আমায় অন্য সংগঠনের দায়িত্ব দিলে সেখানে যেতে পারি। না হলে আমি নিজেই ঠিক করে নেব কোন ধরনের কাজ করা যায়। বসে থাকতে পারব না।’
তাহলে কী আলাদা দল গড়বেন? এই প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘সব কিছু ঘোষণা করে করতে হয় না। ভাল কাজ হলে আপনা থেকেই সবাই বুঝতে পারে। তবে এখন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রদবদলের সম্ভাবনা। রাজ্যেও কিছু পরিবর্তন হতে পারে। সেটা দেখার পরেই সিদ্ধান্ত। আমি বরং অন্য ভাবে সমাজের সেবা করব। অনেক কিছু করার রয়েছে। সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেব। সবাই জানতে পারবেন।’ আর এখানেই শোনা যাচ্ছে, নিজস্ব হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গড়তে পারেন দিলীপ। পরে সেই সংগঠন নামতেও পারে বাংলার মাটিতে ভোট যুদ্ধের পথে। জাতীয় দল ছেড়েও যে নিজের আলাদা দল গড়ে রাজনীতিতে সাফল্য মেলে সেটা তো মমতাই দেখিয়ে দিয়েছেন। এবার হয়তো তাঁর সেই দেখানো পথেই হাঁটা দেবেন দিলীপ।