আগামী সপ্তাহ থেকেই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা
নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বাংলার(Bengal) বুকে জেলায় জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার যে সব কর্মীরা(Panchayat Workers) রয়েছেন তাঁদের স্বাস্থ্যবিমা(Health Insurance) ছিল না। কংগ্রেস জমানায় বা বাম জমানায় এই সব কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। কিন্তু সেই স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার দাবি যেমন ছিল ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কর্মীদের তরফে তেমনি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিমাও প্রদান করা হোত। অর্থাৎ সরকারি কর্মচারী হয়েও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মতো স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পেতেন না বাংলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কর্মী। সেই ছবি বদলে দিচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। গত বছরের একদম শেষ দিকে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় থাকা প্রায় ৩০ হাজারের বেশি পঞ্চায়েত কর্মীকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাঁরা প্রত্যেকেই এবং তাঁদের পরিবারে যারা যারা ওই কর্মীর ওপর নির্ভরশীল তাঁরা এবার থেকে সবাই ক্যাসলেস বিমার সুবিধা পেতে চলেছেন। আগামী সপ্তাহ থেকেই Online’র মাধ্যমে তাঁদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ শুরু হতে চলেছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ এবার থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। চিকিৎসা খরচ দেড় লক্ষ টাকার বেশি হলে, রাজ্য সরকার তা খতিয়ে দেখে পরিশোধের ব্যবস্থা করবে।
এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিমা প্রদান করা হলেও স্বাস্থ্যবিমার আওতায় ছিলেন না সমগ্র রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কর্মীরা। পরিবর্তনের পরে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই নিয়ে বার বার দাবি জানিয়েছেন। সেই দাবিকেই মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা মান্যতা দেয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে হওয়া রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে প্রায় ৪০ হাজার পঞ্চায়েতের কর্মী, পেনশন প্রাপক এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্য মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষকে West Bengal Health Scheme’র আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং তাঁদের ক্যাশলেস বিমার সুবিধা দেওয়া হবে। সেই সূত্রেই ওই সুবিধা পাওয়ার জন্য অনলাইনে নাম লেখানোর কাজ শুরু হবে আগামী সপ্তাহে। নবান্ন সূত্রে খবর, West Bengal Health Scheme’র নির্দিষ্ট পোর্টালেই পঞ্চায়েত কর্মীদের জন্য পৃথক একটি ‘Employees of PR Bds.’ এবং ‘Pensioners of PR Bds.’ নামে দুটি লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। তাতে ক্লিক করে পাওয়া ওয়েবপোর্টালে বেনিফিসিয়ারিদের সমস্ত তথ্য আপলোড করতে হবে।
নাম নথিভুক্তকরণের সময় কর্মীদের নামের পাশাপাশি আপলোড করতে হবে তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও নাম, ঠিকানা, ছবি, আধার নম্বর এবং অন্যান্য পরিচয়পত্রের ছবি। কর্মীদের স্ত্রী, বাবা, মা, মেয়ে এবং ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেও এই বেনিফিট পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আপলোড করা তথ্য যাচাইয়ের ভিত্তিতে বিডিও অফিস থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মীদের অনুমোদনপত্র বা প্রয়োজনীয় শংসাপত্র দেওয়া হবে। আর জেলা পরিষদের আধিকারিকদের জন্য এই কাজ করবেন জেলা পরিষদের এগজিকিউটিভ অফিসার। এই শংসাপত্র দেখলেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে মিলবে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা। সব মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ এবার থেকে প্রথমে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। চিকিৎসা খরচ দেড় লক্ষ টাকার বেশি হলে, রাজ্য সরকার তা খতিয়ে দেখে পরিশোধের ব্যবস্থা করবে। পঞ্চায়েত কর্মীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিডিও এবং জেলা পরিষদ অফিসেই পোর্টালের মাধ্যমে নাম লেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।