‘আমি কোনও দল করি না’, বলেন কী মহারাজ, চমকে গেল বিজেপি
নিজস্ব প্রতিনিধি: ক্ষোভের বাঁধ ভাঙল একটা বৈঠক সেরেই। নিজে একটি জাতীয় দলের রাজ্যসভার সাংসদ হয়েও সাংবাদিকদের সামনে জানিয়ে দিলেন, তিনি নাকি কোনও দলই করেন না। যেহেতু সাংসদ হয়েছেন তাই মেয়াদসীমার শেষ সময় পর্যন্ত তিনি সাংসদ থাকবেন। এর বাকি তিনি কিছু জানেন না। আর এই কথা শুনেই এখন মাথায় হাত পড়েছে পদ্মের(Bengal BJP)। কেননা যে এই সব কথা বলছেন, তিনি তো সামান্য কেউ নন। আর রাতারাতি তিনি এই কথা বলছেন না। তিনি মুখ খুলছেন একজনের সঙ্গে বৈঠক সেরেই। সেই বৈঠক তিনি করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস(TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সঙ্গে। আর সেই বৈঠক হয়েছে আবার তার খাস রাজপ্রাসাদে কোচবিহারের(Coachbehar) মাটিতে। মমতার সঙ্গে সেই বৈঠক করেই বিজেপিকে তুলোধনা করলেন তিনি, মানে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী নেতাদের অন্যতম মাথা অনন্ত মহারাজ(Anant Maharaj)। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ কার্যত এদিন বুঝিয়েই দিয়েছেন, জার্সি বদল সম্ভবত এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার কোচবিহারের চকচকায় অনন্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন মমতা। তাঁকে স্বাগত জানাতে নিজেই এগিয়ে আসেন অনন্ত মহারাজ। কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী হলুদ গামছা, পান ও সুপারি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁকে স্বাগত জানান হয় ভিতরে। উভয়ের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়। মহারাজের জন্য উপহার হিসেবে মমতা শাল নিয়ে গিয়েছিলেন। মহারাজের প্রাসাদে শুধু গ্রিন টি খান মুখ্যমন্ত্রী। মহারাজার কাছে তাঁর বংশের কাহিনি জানতে চাইলেও, রাজনীতির পা মাড়াননি মমতা। অন্তত এমনটাই দাবি মহারাজের। তবে মমতা যেতেই বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর যাবতীয় ক্ষোভ সাংবাদিকদের কাছে উগরে দিলেন মহারাজ। আর এখানেই প্রশ্ন, মমতা কী এমন বললেন বা করলেন যে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটালেন মহারাজ! তাহলে কী তাঁর তৃণমূলে যোগদান খুব শীঘ্রই দেখা যাবে? গত দুই সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে চলেছে একটি ঘটনা তথা সম্ভাবনার কথা। বাংলার ৩ বিজেপি সাংসদ নাকি যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূলের সঙ্গে। সেই ৩জনের ২জন যদি অনন্ত মহারাজ য়ার সৌমিত্র খাঁ হন, তাহলে বাকি ১জন কে? এইদিন কিন্তু সেই প্রশ্নও মাথাচাড়া দিয়েছে।
মমতার সঙ্গে বৈঠক সেরেই অনন্ত মহারাজ এদিন জানিয়ে দেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন আমার বাড়িতে, এটা খুবই আনন্দের। উনি এসেছিলেন। আমি যথাসম্ভব আপ্যায়ণ করেছি। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন। তবে রাজনীতির কোনও কথা হয়নি। সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। আমার বাড়ি দেখে উনি খুব খুশি। বললেন, এত সুন্দর বাড়ি আমি আগে দেখিনি। খুব ভালো লেগেছে ওঁর। বাড়ির প্রশংসা করছিলেন। আমাকে বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ করে পাঠিয়েছে। যেহেতু আমি পদ গ্রহণ করেছি, তাই ৫ বছর থাকব। এরপরের কথা আমি জানি না। আমি দল কোনও দল করি না। আমি দি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন করি। আমি দি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সংগঠন করি, বিজেপির সাংসদ হয়েছি। আজ পর্যন্ত আমায় কোচবিহারে বিজেপির অফিসে পর্যন্ত দেখা যায়নি। আমি যে বিজেপির একজন সদস্য, আজ পর্যন্ত তাঁদের কোনও নেতা বলেনি। সেন্ট্রাল টিম এল, তাঁরাও বলছে না। আমাকে মানেই না ওরা। তাহলে আমি কী করব? এরা আমায় কী সম্মান দেবে? সম্মান দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সম্মান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, আমার সঙ্গে কোচবিহারে দেখা করেছেন। আমার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এরা কেন ডাকছে না, কেন উলটো পালটা বলছে, আমি জানি না। আমি তো আমার সাংসদ কোটার টাকাটাও খরচ করতে পারছি না।’