পর পর ৩ পুরসভায় পুরপ্রধানরা দলের বিরুদ্ধে, নেপথ্যে কী অধিকারী এফেক্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রথমে অধিকারীদের নিজেদের শহর কাঁথি(Contai)। তারপর মেদিনীপুর শহর(Midnapur Town)। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল অধিকারীদের জেলারই আরেক পুরসভা, এগরা(Egra)। এই ৩ পুরসভাতেই দলের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন সেখানকার পুরপ্রধানরা। তার জেরে এই ৩ পুরসভার পুরপ্রধানদের তাঁদের পদ থেকে সরাতে তৃণমূলের(TMC) কাউন্সিলররা অনাস্থা প্রস্তাব(No Motion Confidence) উত্থাপন করতে চলেছেন। কাঁথি পুরসভার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুর ও এগরার ক্ষেত্রেও সেই প্রস্তাব জমা দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যে মেদিনীপুর জুড়ে অধিকারীদের দাপট ছিল একসময়, এখন তাঁদের সেই রাশ আলগা হয়ে যাওয়ার পরেও কেন তৃণমূলকে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে ওই সব পুরপ্রধানদের নিয়ে। কেন রাজ্যের শাসক দলের কাছে থাকছে না এই সব পুরপ্রধানদের সঙ্গে অধিকারীদের গোপন যোগাযোগের খবর!
কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান সুবল মান্না সবার আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একরকম বিদ্রোহী হয়েছেন। প্রকাশ্যেই শিশির অধিকারীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে ও তাঁকে নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে চিহ্নিত করে দলের বিরাগভাজন হয়েছেন। তাঁকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরাতে কাঁথির ১৬জন তৃণমূল কাউন্সিলর একযোগে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। আদালত সুবলের সহায় না হলে তাঁর পদ হারানো শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। অন্যদিকে মেদিনীপুর শহরে সেখানকার পুরপ্রধান সৌমেন খানকে অপসারণ করার দাবি জানিয়ে মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূলের ১০জন কাউন্সিলার। তাঁদের দাবি, পুরপ্রধান তাঁদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছেন। উন্নয়নের স্বার্থে যে টাকা আসছে, তা কাউন্সিলারদের মধ্যে সমবণ্টন না করে সেই টাকায় ‘মোচ্ছব’ করা হচ্ছে। যার ফলে পুরসভা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই তাঁরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। আবার এগরা পুরসভাতে পুরপ্রধান স্বপন কুমার নায়েকের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দলেরই ৬ কাউন্সিলর। মেদিনীপুর ও এগরা দুটি ক্ষেত্রেই বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের দাবি, অধিকারীদের অঙ্গুলিহেলনেই চলছেন ৩ পুরসভার ৩ পুরপ্রধান। আর সেখানেই প্রশ্ন, ৩ পুরপ্রধানের সঙ্গে যে অধিকারীদের যোগাযোগ রয়েছে তা আগে থেকে কেন বুঝতে পারল না তৃণমূল!
এখন যা পরিস্থিতি তাতে কাঁথিতে পুরপ্রধানের পদ বেশিদিন নিজের দিকে ধরে রাখতে পারবেন না সুবল। কেননা ২২টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট ওই পুরসভায় তৃণমূলের ১৭জন কাউন্সিলর রয়েছেন। তার মধ্যে সুবলও একজন। এখন তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন দলের বাকি ১৬জন কাউন্সিলর। এদের ঠেকিয়ে রেখে তিনি গদি বাঁচাতে পারবেন না। অন্যদিকে মেদিনীপুর পুরসভায় ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টিই তৃণমূলের দখলে। সেই ২০জন কাউন্সিলরের মধ্যে সৌমেন খান ১জন। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন দলেরই ১০ কাউন্সিলর। তাঁর স্বপক্ষে রয়েছেন ৯জন কাউন্সিলর। তাঁকে অপসারণ করতে হলে নূন্যতম ১৩জন কাউন্সিলরের সমর্থন প্রয়োজন। বিরোধীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সেই সংখ্যা যেমন সৌমেন খান পেয়ে যেতে পারেন, তেমনি তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়া কাউন্সিলররাও সেই সাহায্য পেয়ে তাঁকে সরিয়ে দিতে পারে। এগরাতে ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। সেই ৭জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১জন হলেন স্বপন কুমার নায়েক। নির্দলের সমর্থনে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। এখন সেই তৃণমূলেরই ৬ কাউন্সিলর স্বপনের বিরুদ্ধে। এখানে কিন্তু বিজেপি ৫ কাউন্সিলর, কংগ্রেসের ১জন কাউন্সিলর এবং নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থনে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন স্বপন।