কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার জনককুমার গর্গ
নিজস্ব প্রতিনিধি: গতকাল সকালে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের রাঙাপানিতে ঘটে গিয়েছে রেল দুর্ঘটনা(Kanchanjunga Express Accident)। ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কলকাতার শিয়ালদামুখী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে মালগাড়ি। সেই দুর্ঘটনায় গতকালই বেসরকারি ভাবে ১৫জনের মারা যাওয়ার খবর এসছিল। আহতের সংখ্যা ছিল ৬০’র বেশি। যদিও এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা ১০ ও আহতের সংখ্যা ৪২। এদের মধ্যে ৩৮জন ভর্তি রয়েছেন শিলিগুড়ি ও ফাঁসিদেওয়ার নানা হাসপাতালে। সেই দুর্ঘটনার জেরে তদন্তের নির্দেশ(Order of Investigation) দিয়েছে রেল। সেই তদন্ত শুরু হচ্ছে এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই। এদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন উত্তর-পূর্ব রেলের(North East Frontier Railway) মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার(Chief Security Commissioner) জনককুমার গর্গ। কেননা তাঁর তত্ত্বাবধানেই এই তদন্ত হবে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল থেকে জানানো হয়েছে গর্গ এদিন গিয়ে মালগাড়ির গার্ড, কাঞ্চনজঙ্ঘার ইঞ্জিনের দুই চালক এবং অতিরিক্ত গার্ডের সঙ্গে কথা বলবেন। মূলত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গর্গ কথা বলবেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যারা সবার আগে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধারকার্য শুরু করেছিলেন। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, কোনও সাধারণ মানুষের কাছে দুর্ঘটনা সম্পর্কিত কোনও তথ্য থাকলে তাঁরা তা তদন্ত কমিশনের কাছে জানাতে পারবেন। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের অতিরিক্ত ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের অফিসে এই কমিশন বসবে। এ ছাড়াও সুরক্ষা কমিশনারকে সরাসরি চিঠি পাঠিয়েও এই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা যেতে পারে বলেও জানিয়েছে রেল। এদিকে এই দুর্ঘটনার পরে অভিযোগ উঠেছে, রেলের লোকো পাইলত বা ট্রেনের ইঞ্জিনের চালক এবং গার্ডদের এখন নাকি নিয়মের বাইরে নিয়ে নিয়মিত ভাবে অতিরিক্ত সময় ডিউটি করতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, মালগাড়ির লোকো পাইলটরা ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১০ ঘন্টা পরিষেবা দিতে পারবেন। কিন্তু সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
পরিবর্তে তাঁদের দিয়ে ১৬-১৭ ঘণ্টা রেক চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে। শীতের সময় কোনওভাবে এই চালকরা সামলে নিলেও, গরমকালে রীতিমতো শরীর ভেঙে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে রেল মন্ত্রক এবং রেল বোর্ডের কাছে বারবার উত্থাপন করা হলেও, লোকো পাইলট নিয়োগের ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। শরীর ক্লান্তির জন্যই চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও তেমনি হয়েছে বলে মনে করছেন রেল আধিকারিকদের একাংশ। লোকো পাইলটদের মতো একই অবস্থা গার্ডদেরও। কার্যত রেলে এখন লোকো পাইলট আর গার্ড দুটি ক্ষেত্রেই নাকি সেই ভাবে নিয়োগ হচ্ছে না। শূন্যস্থান ক্রমশই বাড়ছে। প্রয়োজনের তুলনায় দেশের রেল ব্যবস্থায় এখন নাকি অনেক কম লোক পাইলট, গার্ড, স্টেশন মাস্টার, কেবিন মাস্টার রয়েছেন যা দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।