বিজেপির ঝুলি থেকে রানাঘাট ছিনিয়ে আনতে মহুয়াকে বাড়তি দায়িত্ব
নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি ছিলেন কংগ্রেসে। পরে এসেছেন তৃণমূলে। প্রথমে ছিলেন বিধায়ক, পরে হয়েছেন সাংসদ। প্রথম দফার সাংসদ দশাতেই তিনি দেশকে বিশেষ করে মোদি ব্রিগেডকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর তুখোড় ইংরেজি আর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জ্ঞানের সামনে দাঁড়াতে না পেরে মোদি ব্রিগেড তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নিয়ে তাঁকে সংসদ থেকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু জনগন আবারও তাঁকেই নির্বাচিত করে পাঠিয়ে দিয়েছে সংসদের অন্দরে। তিনি যাতে দ্বিতীয়বার সংসদ ভবনে পা রাখতে না পারেন তার জন্য খোদ নরেন্দ্র মোদি তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে দুই বার এসেছিলেন ভোট প্রচারে। কিন্তু কোনও কিছুতেই তাঁর জয় ঠেকানো যায়নি। বিজেপিকে তিনি সদ্য হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনেও তুড়ি মেরে হারিয়েছেন। আর সেটা দেখেই এবার তাঁর ঘাড়েই বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বিজেপির ঝুলি থেকে বার করে আনতে হবে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। ভাবছেন তো কার কথা বলছি! তিনি আর কেউ নন বাংলার আরেক দামাল দাপুটে কন্যা মহুয়া মৈত্র(Mahua Moitra)।
আগামী ১০ জুলাই রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে উপনির্বাচন(Ranaghat Dakshin Assembly Seat Bye Election)। একুশের ভোটে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন মুকুটমণি অধিকারী(Mukutmani Adhikari)। এবারের লোকসভা নির্বাচনের সামান্য কয়দিন আগে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। বিজেপির বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফাও দেন। তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে লড়াইও করেন। কিন্তু হেরে যান। অনেকেই ভেবেছিলেন মুকুটের সঙ্গে এবার হয়তো তৃণমূলের দূরত্ব বাড়বে, মুকুট হয়তো বিজেপিতেই ফিরে যাবেন। কিন্তু তা হয়নি। মুকুট থেকে গিয়েছেন তৃণমূলেই। আর তার জেরে মুকুটকেই তাঁর ছেড়ে আসা রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ফের প্রার্থী করেছেন মমতা। কার্যত মুকুটে আস্থা রেখেছেন মমতা। তবে এবারে যাতে তাঁর জয় নিশ্চিত হয় এবং ওই কেন্দ্র থেকে যাতে বিজেপি আর কোনও ভাবেই জিততে না পারে তার জন্য মমতা বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছেন মহুয়াকে। মেন্টরের ভূমিকা দেওয়া হয়েছে নদিয়া(Nadia) জেলার কৃষ্ণনগরের(Krishnanagar Constituency) তৃণমূল সাংসদ(TMC MP) মহুয়া মৈত্রকে।
কেন মহুয়া? তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মহুয়া যখন প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলের হয়ে তখন তিনি লড়াই করেছিলেন করিমপুর থেকে। সেটা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ের কথা। সেই নির্বাচনে তৃণমূল একা লড়াই করেছিল বাম-কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে। তার আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস তৃণমূলের থেকে ভোট প্রাপ্তির নিরিখে ৪০ হাজার ভোটে এগিয়ে গিয়েছিল। সেই হিসাবে করিমপুরে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে লড়াই শুরুই করতে হয়েছিল ৪০ হাজার ভোটে পিছিয়ে থেকে। মহুয়ার লড়াই সেই হিসাবে মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু মহুয়া সেই নির্বাচনে জিতেছিলেন প্রায় ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে। কেননা মহুয়া নিজে যেমন কংগ্রেসি পরিবারের মেয়ে, তেমনি তাঁর জনসংযোগের কৌশলও অন্যদের থেকে একদম আলাদা। এবারে সদ্যই হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণে বিজেপি তৃণমূলের থেকে এগিয়ে রয়েছে ৩৭ হাজার ভোটে। সেই হিসাবে এবারের উপনির্বাচনেও বিজেপির জেতার কথা। কিন্তু সেটা যাতে না হয় তার জন্যই মমতা মাঠে নামিয়েছেন মহুয়াকে। কেননা তাঁর বিশ্বাস, যে নিজে ৪০ হাজার ভোতে পিছিয়ে থেকে ১৬ হাজার ভোটের মার্জিনে জিততে পারে, সে চেষ্টা করলে প্রায় একই ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা আসনও তৃণমূলকে পাইয়ে দিতে পারে। আর তাই মমতার নেক নজরে মহুয়া।