মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সুন্দরবনের আসন্ন প্রসবাদের নিয়ে আসা হল নিরাপদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে লাগু রয়েছে আদর্শ আচরণবিধি। তারপরেও বজায় রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নজরদারি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমলের(Cyclone Rimal) জেরে যে সুন্দরবন(Sundarban) এলাকা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে সেই সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল তিনি। সেই ঝড়ের জন্য যে ফেরি সার্ভিসও যে বন্ধ রাখা হয়েছে সেটাও জানেন তিনি। এই অবস্থায় তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন সুন্দরবনের গ্রামীণ এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে আসন্ন প্রসবাদের দ্রুত নিকটবর্তী নিরাপদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে। তাঁর সেই নির্দেশ মেনেই সুন্দরবনের শতাধিক প্রসূতিকে(Pregnant) বিভিন্ন দুর্গম দ্বীপাঞ্চল থেকে তুলে সংশ্লিষ্ট ব্লকের কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এটাই বাংলার মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সুশাসনের বড় নিদর্শন।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমলের সবথেকে বেশি প্রভাব পড়তে চলেছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। রবিবার দুর্যোগ নেমে আসার আগে তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবশ কিছু কাজ সেরে রেখে দিয়েছে দুই ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার কথা এদিন মধ্যরাতে। যদিও তার প্রভাব কতদিন থাকবে তা চট করে বলা সম্ভব নয়। কেননবা আম্ফানের রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের আনাচেকানাচে। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, আসন্ন প্রসাবদের যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী ও ন্মিরাপদ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনে দাখিল করতে। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে শতাধিক প্রসূতিকে বিভিন্ন দুর্গম দ্বীপাঞ্চল থেকে তুলে সংশ্লিষ্ট ব্লকের কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সাগর, পাথরপ্রতিমার জি প্লট, নামখানার মৌসুনি দ্বীপ, ঘোড়ামারা ইত্যাদি জায়গা থেকে প্রসূতিদের নিয়ে আসা হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দুই-চারদিনের মধ্যে যাঁদের প্রসব হবে না তাঁদের আবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
দুই ২৪ পরগনা জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা(Health Officers) জানিয়েছেন, মূলত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দুটি স্বাস্থ্যজেলার আওতায় থাকা এলাকার যে সব প্রসূতিদের আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে ব্লকের কাছাকাছি হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কোথায় কেমন পড়বে তা এখনও নিশ্চিত নয়। ঝড়ের সময় বা তার পরে হবু মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে সমস্যা হতে পারে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আগাম এদের নিকটবর্তী জায়গায় এনে রাখা হয়েছে। এছাড়াও জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের তরফ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রাগ হাব করা হচ্ছে। ঝড়ের পর প্রান্তিক এলাকাগুলিতে সহজে পৌঁছনো কঠিন। তাই সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যে ওষুধের প্রয়োজন তা মজুত করা হচ্ছে। জ্বর, ডাইরিয়া, বমি, ওআরএস ইত্যাদি ওষুধ রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়াও আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যবিভাগের কর্তারা নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্লকে ডাক্তারদের নিয়ে বিশেষ দল তৈরি। যেখানে যেমন প্রয়োজন হবে সেখানে তাঁদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে স্বাস্থ্যবিভাগ। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদেরও গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। দুই ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকা, বিশেষ করে সাগর ব্লকের বিভিন্ন দ্বীপের বাসিন্দাদের ফ্লাড সেন্টার, অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে আনা হয়েছে।