আমলাদের কাজের বার্ষিক মূল্যায়নের ওপরেও এবার থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর নজরদারি
নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা ভোটের পালা মিটে যেতেই প্রশাসনিক ভাবে আরও কড়া পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই ইঙ্গিত তিনি শুধু নিজ দলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদদেরই শুধু দেননি, দিয়েছেন রাজ্যের সরকারি আধিকারিক থেকে পুলিশকেও। এখন শোনা যাচ্ছে, রাজ্যের আমলা মহলকেও(State Bureaucrats) বড় বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে তাঁর ভূমিকা যে আগের তুলনায় বেশ কড়া হতে চলেছে, সেই বার্তা পরপর দু’টি বৈঠকে আলাদা ভাবে দিয়েছেন মমতা। এ বার আমলাদের কাজের বার্ষিক মূল্যায়নের ওপরেও যে তাঁর সরাসরি নজর থাকতে চলেছে সেটাও নবান্নের আধিকারিকদের মারফত জানা গিয়েছে। নবান্ন(Nabanna) সূত্রের দাবি, তাঁর সঙ্গে কথা বলে তবেই আমলাদের মূল্যায়নে নম্বর দেওয়ার নির্দেশ মুখ্যসচিব(Chief Secretary) ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকাকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সারা বছর ধরে কী কাজ তাঁরা করেছেন, তা লিখতে হয় আমলাদের। নতুন ভাবনা, কাজে অভিনবত্ব, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা, কাজের গুণমান ইত্যাদি বিবিধ বিষয় সেই রিপোর্টে থাকে। সেই রিপোর্ট পৌঁছয় মুখ্যসচিবের কাছে। তিনি তা খতিয়ে দেখে মতামত এবং নম্বর লেখেন। তার পরে রিপোর্টটি পৌঁছয় দফতরের মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এই রিপোর্টকে বলা হয় Annual Confidential Report বা ACR। অনেকে একে বার্ষিক মূল্যায়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট নামেও অভিহিত করেন। প্রবীণ আমলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, প্রথা অনুযায়ী, মুখ্যসচিব যে নম্বর বা মতামত লিখছেন, তার সঙ্গে সহমত হতে পারেন মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী। আবার তা না-ও হতে পারেন তাঁরা। ফলে সেই মতো নিজেদের মূল্যায়ন রিপোর্টে জানানোর সুযোগ থাকে তাঁদের কাছেও। আর এবার সেখানেই কঠোর হচ্ছেন মমতা। নবান্ন সূত্রের দাবি, মুখ্যসচিবকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, এ বার থেকে ACR-এ নম্বর দেওয়ার আগে কথা বলে নিতে হবে তাঁর সঙ্গে। কেননা তিনি মনে করছেন, এমন অনেক আধিকারিক রয়েছেন, যাঁরা ভাল নম্বর পেতে পারেন অথচ তা দেওয়া হয় না। আবার অনেকে এমনও রয়েছেন, যাঁদের অহেতুক দেওয়া হয় ভাল ভাল নম্বর। কাজের গুণমানের সঙ্গে মূল্যায়নের সামঞ্জস্য আনতে চাইছেন মমতা।
প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, এক জন আমলার কর্মজীবনে এই এসিআর এবং তাতে থাকা নম্বরের অসীম গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, পদোন্নতি, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে ডেপুটেশন ইত্যাদি প্রশ্নে বিগত পাঁচ-সাত বছরের এসিআর খতিয়ে দেখা হয়। সুতরাং, সেই রিপোর্ট খারাপ থাকলে ফল ভুগতে হতে পারে সংশ্লিষ্টকে। তবে রাজ্যের সব IAS ও IPS আধিকারিকদের ওপর মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ কার্যকর হবে কিনা তা এখননও স্পষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র জেলাশাসক এবং মূল দফতরগুলির ক্ষেত্রেই হয়তো এই পদ্ধতি অনুসরণ হতে পারে। কারণ, আধিকারিকদের সংখ্যা বিপুল। তবে যেটা আলাদা করে নজর কাড়ছে রা হল মুখ্যমন্ত্রীর এমন অবস্থানের সময়টা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই পুলিশ এবং সাধারণ প্রশাসনকে কড়া দাওয়াই দিয়ে চলেছেন মমতা। বিভিন্ন খামতি এবং গাফিলতি বার করে চেপে ধরছেন বিভিন্ন আধিকারিককে। তাই এ বার আধিকারিকদের মূল্যায়নেও তাঁর সরাসরি নজর রাখার গুরুত্ব অনেক।