রত্না হাজির সভায়, নাম না করে শোভনকে তুলে ধরলেন মমতা
নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি দিদির ‘কানন’। ছিলেন কলকাতার মেয়র। রাজ্যের মন্ত্রী। তৃণমূলের বিধায়ক এবং দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি। তারপরেও শুধুমাত্র ঘরের কোন্দল, পরকিয়া আর ইগোর জন্য হারিয়েছেন একাধিক পদ। পরে কিছু পদ থেকে নিজেই সরে দাঁড়ান। যাত্রা তাঁর এখানেই শেষ নয়, ছেড়ে দিলেন তিনি তৃণমূলও। প্রেমিকার হাত ধরেই যোগ দিলেন পদ্মে। ভোটেও দাঁড়ালেন একুশের যুদ্ধে। কিন্তু হারলেন। পদ্মের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ালেন। তবুও এখনও তাঁর আনুষ্ঠানিক ভাবে ফেরা হল না তৃণমূলে। তাঁর স্ত্রী এখন বিধায়ক ও কাউন্সিলর। বেহালা(Behala) এখন দেখেন সেই স্ত্রীই। দলও তাঁর পাশে। তবুও তিনি অতীত হয়ে যাননি সম্পূর্ণ। কেননা দিদিই যে তাঁর পাড়ায় সভা করতে এসে তাঁর নাম না করেই তুলে ধরলেন তাঁকে। বুঝিয়ে দিলেন, কাননের তৃণমূলে(TMC) প্রত্যাবর্তন না ঘটলেও তিনি এখনও ক্লোজড চ্যাপ্টার হয়ে যাননি। যে কোনও দিন তিনি ফের ফিরতে পারেন স্বমহিমায়। হাসছেন বৈশাখী(Baishakhi Banerjee)। সে হাসি যুদ্ধজয়ের। পাশে ঘরে বসে দিদির কানন থুড়ি শোভন। সভায় তখন হাজির স্ত্রী রত্না। নজরে শোভন চট্টোপাধ্যায়(Sovon Chatterjee)।
এদিন দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা কলকাতা পুরনিগমের চেয়ারপার্সন মালা রায়ের সমর্থনে বেহালা চৌরাস্তায় একটি সভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই সভায় হাজির ছিলেন তৃণমূলের বিধায়িকা তথা কাউন্সিলর এবং শোভনের প্রাক্তন স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়(Ratna Chatterjee)। মমতা নিজের সভা শুরুর আগে রত্নার নাম স্বীকার করে নেন হাজিরাদের তালিকায়। তারপরে বক্তব্য শুরুতে তিনি তুলে ধরেন বেহালার উন্নয়ন নিয়ে। সেই সময় উঠে আসে মেট্রো রেলের কথা। আর তখনই শোভনের নাম না করেই তাঁকে কার্যত ক্রেডিট দেন তৃণমূলনেত্রী। বুঝিয়ে দেন কানন তৃণমূলে না ফিরলেও দিদির হৃদয়ে এখনও তিনি কানন হয়েই রয়ে গিয়েছেন। তাই প্রতিবছর এখনও দিদির কাছে থেকে ভাইফোঁটা নিতে যেতে হয় কাননকে। এদিনের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘হাঁটা আমায় দেখে চমকায়। আমি চমকাই না। আমার পায়ে পায়ে চলতে ভাল লাগে। আজ দুটো রোড-শো করেছি। ঘামে চুপচুপ করছিলাম। ১৫ মিনিটের জন্য বাড়ি গিয়ে শাড়ি ছেলে এলাম। বাড়ি ঢুকলে বলতে মুড থাকে না। কিন্তু বেহালা বলে কথা। শেষের দিকে আসবই। না হলে আমার জীবনের জয়যাত্রা সম্পূর্ণ হতে পারে না। আপানারাই জন্ম দিয়েছেন।’
এরপরেই মমতা বলেন, ‘বেহালা কী ছিল, কী হয়েছে। এখান দিয়ে মেট্রো যাচ্ছে। এটা কার সময়ে হয়েছিল? কে করেছিল? টাকা রেখে এসেছিলাম পিনবুকে, যাতে আমি রেলমন্ত্রী না থাকলেও কাজ হয়। প্রকল্প যাতে বাতিল করতে না পারে। মনে আছে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এসে প্রকল্প উদ্বোধন করেছিলাম। আর এক জনকে ধন্যবাদ দেব। যার কথা না বললেই নয়। হয়তো আজ সে সরাসরি তৃণমূল করে না। সেটা অন্য বিষয়। তখন তিনি মেয়র ছিলেন। কোন কোন স্পটে স্টেশন হবে, জমি মিলছিল না। নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে জমি কিনে স্টেশন তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখনও অনেক লোক টাকা পায়নি। আজ এসে প্রধানমন্ত্রী তিন বার করে উদ্বোধন করছে। লজ্জাও করে না, একটা প্রকল্প করতে ১৩ বছর লাগে! আমি ২০০৯ সালে করেছিলাম। শেষ করতে এত বছর লাগল।’ বস্তুত মমতা এদিন বুঝিয়ে দিলেন, কানন থুড়ি, শোভন চট্টোপাধ্যায় এখনও রাজনীতি বা তৃণমূল কোথাও অতীত হয়ে যাননি।