মেয়ের হয়ে মাঠে নামছেন মা, মধুপর্ণার হয়ে ব্যাটন ধরলেন মমতা
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আগামী ১০ জুলাই। সেই ৪ কেন্দ্রের জন্য এদিন অর্থাৎ ১৪ জুন নিজেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)। আর সেই প্রার্থী তালিকায় সব থেকে বড় চমক উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা(Bagda) কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে মতুয়া সমাজের বড়মা বীণাপাণি দেবীর নাতনি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের(Mamatabala Thakur) মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুরকে(Madhuparna Thakur)। কিন্তু মধুপর্ণার নাম তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে উঠে আসতেই নেটিজেনদের একাংশ তথা বিজেপি সমর্থকেরা বিদ্রুপ শুরু করেছেন। মেয়ের প্রতি এই বিদ্রুপ মেনে নেননি মমতাবালা। তিনি এবার মাঠে নেমে পড়লেন মেয়ের হয়ে ব্যাটন ধরতে। নিজ বার্তায় তৃণমূলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি জানালেন, ‘সমগ্র মতুয়া সমাজ থেকে ধন্যবাদ জানাই মতুয়াদের মধ্যে থেকে প্রার্থী করার জন্য। আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করব এই আসনটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) হাতে তুলে দিতে। কাল থেকে প্রচার শুরু। আমার মেয়ে ধর্নায় বসেছিল, কিছু পাওয়ার জন্য নয়। এটা অধিকারের লড়াই। কখনও তৃণমূল থেকে প্রার্থী চাওয়ার জন্য ধর্নায় বসিনি। ঠাকুরবাড়ির মানুষের রক্তে রয়েছে সাধারণ মানুষের সেবা করা। আমার মেয়ে সেই কাজে সচেষ্ট থাকবে।’
বীণাপাণি দেবীর বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী হলেন মমতাবালা ঠাকুর। বীণাপাণি দেবী আমৃত্যু বড় ছেলের সঙ্গেই থাকতেন। সেই বাড়িতেই কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ও বড়মার মৃত্যুর পরেও থাকছিলেন মমতাবালা ও তাঁর মেয়ে মধুপর্ণা। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে মতুয়া সমাজের উৎসবের মধ্যে অভিযোগ ওঠে যে বড়মার সেই ঘরের দখল নিয়েছেন বীণাপাণি দেবীর ছোট ছেলে মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুরের বড় ছেলে তথা বিজেপির সাংসদ ও কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্তড়ী শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর অনুগামীরা। সেই ঘরের দখল ফেরত দিতে পারেনি পুলিশ। ফেরত দেয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীও। সেই ঘর ফেরত চেয়ে মধুপর্ণা লোকসভা নির্বাচনের সময় অনশন আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কেননা মধুপর্ণার দাবি, বড়মার ঘরের দখল নিতে গিয়ে শান্তনু ও তাঁর অনুগামীরা তাঁদের পুরো বাড়ি দখল করে নিয়েছেন। ঘর দখলের এই বিতর্কের মাঝেই মধুপর্ণাকে প্রার্থী করে দিয়েছে তৃণমূল। আর তাই শান্তনু তথা বিজেপির অনুগামীরা দাবি করতে শুরু করেছে, এই প্রার্থী হওয়ার জন্যই মধুপর্ণা নাকি অনশন আন্দোলন করেছিল। আর তার জেরেই মুখ খুলেছেন মমতাবালা।
তৃণমূলের দাবি, মধুপর্ণাকে প্রার্থী করা হয়েছে অনেক ভেবেচিন্তেই। বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রটি মতুয়া অধ্যুষিত। এই কেন্দ্র থেকে একুশের ভোটে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ দাস, যিনি আগে বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। তৃণমূলের প্রতীকে তিনি ২০১১ ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু একুশের ভোটের কিছুদিন আগেই তিনি দলবদলে বিজেপিতে চলে যান। বিজেপি তাঁকে বাগদা থেকে প্রার্থীও করে। তিনি জিতেও যান। হয়ে যান ৩ দফার বিধায়ক। কিন্তু তারপরেই তিনি ফিরে আসেন তৃণমূলে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল তাঁকে প্রার্থীও করে বনগাঁ থেকে। তার জেরেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন বিশ্বজিৎ। সেই কারণে এখন বাগদায় উপনির্বাচন করাতে হচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, বিশ্বজিৎ যেহেতু মতুয়া নন, তাই লোকসভায় মতুয়া সমাজের মানুষেরা তৃণমূলকে খুব একটা সমর্থন জানাননি। বিজেপি শুধু বনগাঁ ধরে রেখেছে তাই নয়, বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রেও বেশ ভালো ভোটে লিড তুলেছে। এই অবস্থায় উপনির্বাচনে বাগদা বিজেপির হাত থেকে বার করতে হলে তৃণমূলকে মতুয়া প্রার্থী দিতেই হতো। মতুয়ারাও সেটাই চাইছিল। আর তাই তৃণমূলের নেক নজরে শান্তনুর বিরোধী, দলের সাংসদ কন্যা তথা মতুয়া সমাজের বড়মা বীণাপাণি দেবীর নাতনি মধুপর্ণা।