পরীক্ষা দিতে পুলিশি ঘেরাটোপে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাও নেতা অর্ণব দাম
নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমার লালগড় ব্লকের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। সেই হামলার ঘটনায় মৃত্যু হয় ২৩ জন ইএফআর জওয়ানের। ওই মামলায় ২৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। দোষীদের মধ্যে ছিলেন মাওবাদী নেতা(Maoist Leader) অর্ণব দাম(Arnab Dam) ওরফে বিক্রম। আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল। সেই অর্ণবই বুধবার পুলিশি ঘেরেটোপে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে(Burdwan University) পা রাখলেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। অর্ণব পিএইচডি(PHD) করতে চান। কারা কর্তৃপক্ষ তার জন্য অনুমতি দেওয়ায় এদিন অর্ণবের মৌখিক ইন্টারভিউয়ের(Verbal Interview) ব্যবস্থা করা হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সূত্রেই এদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা পড়ল এই সাড়া জাগানো মাও নেতার।
সাজা ঘোষণার পর থেকেই অর্ণব বন্দি রয়েছেন জেলে। সংশোধনাগার থেকেই তিনি পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রথমে তাঁকে রাখা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের সংশোধনাগারে। গত ১৭ মার্চ থেকে তিনি বন্দি রয়েছেন হুগলি সংশোধনাগারে। সেখান থেকে তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন অর্ণব। সেই আবেদন বিচারক নথিভুক্তও করলেও বিষয়টি জেল কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে বলেছিলেন। কিন্তু সংশোধনাগারে আসার পর অর্ণবের আবেদন বিশেষ পাত্তা পায়নি। সে জন্য মাওবদী নেতা অনশনের করবেন ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, জেল থেকে পরীক্ষা দিয়েই সেট-এ উত্তীর্ণ হন অর্ণব। সেতা দেখেই আর অর্ণবকে বাধা দেওয়ার পথে হাঁটেনি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। এদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে মৌখিক ইন্টারভিউও দেন অর্ণব।
হুগলি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলে ‘ভাল লাইব্রেরি’ আছে। সেখান থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করছেন অর্ণব। মৌখিক ইন্টারভিউতে তিনি পাশ করলে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবেন। কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এস কে দামের ছেলে অর্ণব। মেধাবী পড়ুয়া মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়গপুর আইআইটি-তে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু তিনটি সিমেস্টারের পর আচমকা খড়গপুর আইআইটির ক্যাম্পাস থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান অর্ণব। পরে জানা যায়, তিনি মাওবাদী হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সংগঠনেও যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তিনি রীতিমত কিষেণজির স্নেহভাজনও হয়ে উঠেছিলেন। পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ে-জঙ্গলে হাতে একে-৪৭ নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। লালগড় আন্দোলনের সময় অযোধ্যা-বাঘমুন্ডির পাহাড়-জঙ্গলে তাঁর গেরিলা বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল যৌথ বাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দাদের। ২০১২ সালে আসানসোলে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।