রাজ্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইছে জঙ্গি সংগঠন KLO(KN)’র সদস্যরা
নিজস্ব প্রতিনিধি: পরিকল্পনা ছিল জীবন সিংহকে দিয়ে উত্তরবঙ্গের(North Bengal) মাটিতে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে দেওয়া। খুনোখুনি, প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে তোলাবাজি, হুটহাট বনধ ঢাকা আর এসবের মধ্যে দিয়ে উত্তরের শান্ত জনজীবনকে অস্থির করে তোলা। কিন্তু সেই হিসাব মেলেনি। আর তার জেরেই যাদের দিয়ে এইসব করানোর ছক কষা হয়েছিল, তাঁরাই এখন বাংলার পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ(Surrender with Arms) করতে চাইছে। নজরে উত্তরবঙ্গ সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাড়া জাগানো জঙ্গি সংগঠন Kamtapur Liberation Organization বা KLO ভেঙে তৈরি হওয়া নয়া জঙ্গি সংগঠন Kamtapur Liberation Organization(Koch Nationalist) বা KLO(KN)। এই নয়া জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাই এখন বাংলার পুলিশ বাহিনীর কাছে বার্তা পাঠিয়েছে দ্রুত আত্মসমর্পণের জন্য। এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর কাছে ৫ কোটি টাকা চেয়ে হুমকি দিয়েছিল। হুমকি দিয়েছিল কোচবিহারের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কেও। আর যদি এই আত্মসমর্পণের ঘটনা যদি ঘটে তাহলে তা হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার ও তাঁর নীতির বড় জয়। বড় সাফল্য। জঙ্গলমহলের পরে উত্তরবঙ্গের বুকে।
মমতা যখন বাংলার ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন রীতিমত অস্থির ছিল জঙ্গলমহলের জনজীবন। নিত্যদিন গুলিগোলা, বিস্ফোরণ, খুনোখুনি, তোলাবাজি, অপহরণ জঙ্গলমহলকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিল। কিষেণজীর মৃত্যু্র পরে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক আত্মসমর্পণের প্যাকেজ সেই ছবি বদলে দিয়েছিল। হিংসা দিয়ে হিংসাকে দমন না করে, শান্তি ও আলোচনার মাধ্যমে জঙ্গলমহলের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছিলেন মমতা। সেই সঙ্গে ছিল জঙ্গলমহলের যে সব যুবক-যুবতীরা মাও চক্রে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁদের ফের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য অস্ত্র সমর্পণ ও পুলিশে হোমগার্ডের চাকরির প্যাকেজ। এই প্যাকেজই আজ জঙ্গলমহলকে মাও মুক্ত করে তুলেছে, সুত্রের দাবি, KLO(KN) জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা এখন পুলিশের কাছে এই প্যাকেজ চেয়েছে আত্মসমর্পণের জন্য। অর্থাৎ তাঁরা ভরসা রাখছেন মমতার পুলিশে, মমতার প্যাকেজে, মমতার প্রশাসনে। এদের দিয়েই উত্তরবঙ্গে আগুন লাগাতে চেয়েছিল গেরুয়া ব্রিগেড। এখন তাঁরাই মুখ ফিরিয়ে ফিরতে চাইছেন সমাজের মূল স্রোতে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, KLO Chief জীবন সিংহ চেয়েছিলেন এদের দিয়ে উত্তরবঙ্গে হিংসাত্মক সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাতে। কিন্তু তাতে বাধ সাধেন এই উত্তরবঙ্গের যুবকেরা। কেননা তাঁর বুঝেছিলেন এই পথে হাঁটলে তাঁরা নিজেরাও ভালো থাকবে না, তাঁদের পরিবারও ভালো থাকবে না। ভালো থাকবে না উত্তরবঙ্গের মানুষজন এবং সর্বোপরি কোচ জনজাতির মানুষেরা। আর তাই জীবন সিংহের ছত্রচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে তাঁরা গড়ে তোলে KLO(KN) জঙ্গি সংগঠন। তবে তখনও তাঁদের গেরুয়া যোগ ছিল। তার জেরেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর কাছে ৫ কোটি টাকা চেয়ে হুমকি, পার্থপ্রতিম রায়কে প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বড় বড় ব্যবসায়ীকে হুমকি ফোন মোটা টাকা চেয়ে। এরা সেই সময় ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পার্বত্য উপত্যকায়। সেখানে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন কুকি ন্যাশনাল আর্মি এবং কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন জঙ্গি গোষ্ঠী এদের সাহায্য করছিল এই সব কাজে। পরে এদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে National Liberation Front of Tripura বা NLFT এবং All Tripura Tiger Force বা ATTF। কিন্তু এবার সবটাই অতীত হতে চলেছে।