উৎসব গিয়েছে থমকে, উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে, মমতায় মত মতুয়াদেরও
নিজস্ব প্রতিনিধি: গত সোম সন্ধ্যায় দেশজুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্বের আইন বা CAA দেশজুড়ে লাগু করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই খবরে বাংলার মতুয়া মহলের(Matua Society) একাংশ উৎসবে মেতে ওঠে। ঢাক, ঢোল, কাঁসর পিটিয়ে, হরিনাম সংকীর্তন গেয়ে, আবির খেলে তাঁরা রীতিমত উৎসবে মেতে ওঠেন। অনেকেই দাবি করেন, তাঁরা নতুন জীবন পেলেন। কেউ বা বলেন, তাঁরা এই প্রথম স্বাধীন হলেন। কেউ কেউ তো অন্ধ ভক্ত হয়ে মোদি(Narendra Modi) ও বিজেপির(BJP) জয়গানে মেতে ওঠেন। কিন্তু এরপর সময় যতই গড়িয়েছে, সেই উৎসবের ছবি ততই ফিকে হয়েছে। পাল্লা দিয়ে ততই বেড়েছে উদ্বেগ। যারা CAA দেশজুড়ে লাগু হওয়ার ঘটনায় দুই হাত তুলে নৃত্য করেছেন, উৎসবে সামিল হয়েছেন, তাঁরাও এখন উদ্বেগে রয়েছেন। কার্যত বুধ সন্ধ্যা থেকেই ছবি বদলে যেতে শুরু করেছে বাংলার মতুয়ামহল হিসাবে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ এবং নদিয়া জেলার রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমা এলাকা। পরিবর্তে মতুয়াদের গোঁসাই থেকে ভক্ত সবাই এখন মমতার(Mamata Banerjee) মতেই ঘাড় হেলাচ্ছেন। এড়িয়ে যাচ্ছেন নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগকে।
সোম সন্ধ্যায় দেশজুড়ে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হতেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার গাইঘাটা ব্লকের ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে আনন্দে মেতেছিলেন মতুয়ারা। কিন্তু ঠিক তার পরের দিন এই জেলারি হাবড়াতে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকেই তিনি সোচ্চার হন CAA নিয়ে। কার্যত সেই সভা থেকে তিনি মতুয়াদের CAA নিয়ে সতর্ক করে দেন। সাফ জানিয়ে দেন, ‘নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেই আপনারা অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। তারপর কিন্তু আর আপনাদের কোনও অধিকার থাকবে না।’ মমতার ওই বক্তব্যের পর আশষ্কা ঘনিয়েছে মতুয়াদের মনে। মমতার বক্তব্যের সঙ্গে এখন সহমত প্রকাশ করেছেন সাধারণ মতুয়া থেকে পাগল, গোঁসাইদের অনেকেই। আর তাই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার রাস্তায় হাঁটতে চাইছেন না মতুয়াদের একটা বড় অংশ। এমনকি আগামী দিনে তাঁরা ঠাকুরবাড়িতে অনশন শুরু করার কথাও ভাবছেন। কার্যত বিজেপির অনেক নেতা থেকে ঠাকুরবাড়ির অনেকেই ভেবেছিলেন, CAA কার্যকর হলেই মতুয়ারা দলে দলে ভিড় জমাবেন ঠাকুরবাড়িতে। আর সেই ভিড়কেই বিজেপি মুখো করবেন তাঁরা। কিন্তু সেই হিসাব মেলেনি। ঠাকুরবাড়িতে বেশি মতুয়া যাননি।
গোঁসাইদের দাবি, মতুয়ারা বুঝতে পেরেছেন, CAA-তে আবেদন করার অর্থই হলো তাঁরা ভারতবর্ষের নাগরিক নন, সেটা মেনে নেওয়া। একইস অঙ্গে মেনে নেওয়া যে তাঁরা অবৈধ ভাবে এদেশে এসেছেন। আর সেটা করতে হলে মতুয়া-সহ উদ্বাস্তুদের বিপদ বাড়ির দুয়ারে এসে কড়া নাড়বে। আর তাই বুধবার থেকেই দেখা যাচ্ছে মতুয়াদের মধ্যে পারতপক্ষে কেউ আর ঠাকুরবাড়ি মুখো হচ্ছেন না। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, বিজেপি ভোটের মুখে CAA ঘোষণা না কলেই পারতো। যা ছবি উঠে আসছে তা কার্যত বলে দিচ্ছে, এই আইন ২৪’র ভোটে বিজেপির কাছে বুমেরাং হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী হাবড়ার সভা থেকে বলেছিলেন, ‘ভোটের মুখে এটা বিজেপির নাগরিকত্বের অধিকার কাড়ার খেলা। মতুয়াদের বলছি, আবেদন করার আগে একবার নয়, ভাববেন হাজার বার। আবেদন করার পর আপনাদের বাবামায়ের জন্মের শংসাপত্র চাইবে। দিতে না পারলেই আপনাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে সহমত পোষণ করেছেন সাধারণ মতুয়া থেকে তৃণমূল প্রভাবিত পাগল, গোঁসাইরাও। তাঁরা যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন না, সে কথাও তাঁরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন। এই গোঁসাইদের দাবি, ‘আমাদের তো আধার, রেশন কার্ড-সহ এ দেশের নাগরিক হিসেবে যা যা থাকা প্রয়োজন, তার সবটাই আছে। কেন্দ্রের যদি এতই দরদ হয়, তাহলে রাজ্যের প্রতিটি ব্লক ধরে ধরে সিটিজেনশিপ কার্ড দিক। কেন নাগরিকত্বের জন্য নতুন করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে আমাদের? আবেদন করলেই তো আমরা বাংলাদেশী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যাব। আবেদন করার মধ্যে আমরা নেই। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কথা বলেছেন। আমরা কিছুতেই কেন্দ্রের ফাঁদে পা দেব না। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে CAA’র বিরুদ্ধে ঠাকুরবাড়িতে অনশন শুরু করব।’