মাথায় অস্ত্রপচারের পরে ভেন্টিলেশনে মুকুল রায়, অবস্থা সঙ্গীন
নিজস্ব প্রতিনিধি: কাঁচড়াপাড়ার বাড়িতে বুধবার রাতে পড়ে গিয়েছিলেন মুকুল রায়(Mukul Roy)। প্রথমে জানা গিয়েছিল, বাথরুমে পড়ে গিয়েছেন তিনি। পরে জানা যায়, বাথরুমে নয়, বাড়ির মধ্যেই হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেছেন মুকুল রায়। তাতেই মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। রাতেই তাঁকে কাঁচড়াপাড়ার বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণী হাসপাতালে। সেখান থেকে সড়ক পথ্যে আনা হয় কলকাতায়। ভর্তি করা হয় বাইপাস সংলগ্ন একটি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে। তাঁর অবস্থা দেখে রাতেই মাথাতে অস্ত্রপচারের(Brain Operation) সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। মাঝরাতে দেড় ঘন্টা ধরে চলে সেই অস্ত্রপচার। সেই অপারেশন সফল হয়েছে বলেই বার্তা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এখন মুকুল রয়েছেন ভেন্টিলেশনে(Ventilation)। তবে তাঁর অবস্থা এখনও সঙ্গীন।
রাজ্য রাজনীতির চাণক্য ছিলেন মুকুল রায়। একসময় হয়ে উঠেছিলেন তৃণমূলের(TMC) সেকেন্ড ইন কম্যান্ডও। কিন্তু অভিষেকের উত্থান মুকুলের সেই অবস্থানকে ধাক্কা দিয়েছিল। দলের সঙ্গে মতভেদ থেকে দূরত্ব এবং একসময় দলত্যাগ। দীর্ঘদিনের তৃণমূল সেনাপতি পরে নিজের নাম লেখান বিজেপিতে। অনেকেই মনে করেন উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার মাটিতে বিজেপি(BJP) যে সাফল্যের মুখ দেখেছিল তার পিছনে ছিল মুকুলের মস্তিষ্ক। যদিও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবির পরে বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে মুকুলের। অনেকেই দাবি করেন, বিজেপির সেই ভরাডুবির নেপথ্যে ছিল মুকুলের পরামর্শকে যথাযথ ভাবে গুরুত্ব না দেওয়। সেই জায়গা থেকেই বিজেপি ত্যাগ করেন মুকুল। যোগ দেন তৃণমূলে। তার জেরে তাঁর বিধায়ক পদ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। সেই সময়েই জানা যায় ডিমেনশিয়া রোগে ভুগছেন মুকুল। হারিয়ে ফেলছেন স্মৃতিশক্তি। অনেকেই এখন আর নাকি চিনতেই পারেন না।
মুকুলের স্ত্রী বিয়োগের পরে তাঁর পরিবারের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে ফের সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায়ও। যদিও সক্রিয়া রাজনীতিতে তাঁকে খুব একটা দেখা যায় না। এরই মাঝে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন মুকুল। বহুদিন ধরেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মুকুল রায়। তাঁর শরীরের মাত্রাতিরিক্ত শর্করা থাকায় নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। তার সঙ্গে জোড়ে ডিমেনশিয়া। এখন তাঁর অবস্থা দেখলে অনেকেরই খারাপ লাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগামী দিনে মুকুল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও সক্রিয়া ভাবে রাজনীতিতে সম্ভবত তিনি আর ফিরতে পারবেন না। ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই তাঁর বাকি জীবন কাটাতে হবে। তাঁরা এটাও জানিয়েছেন, গতকাল পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন মুকুল। মস্তিষ্কে রক্তও জমেছিল। তার জেরেই মাঝরাতে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এদিন তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করে দেখা হবে, কেমন থাকছেন। এর পরে পরবর্তী চিকিৎসার কথা ভাববেন তাঁরা। আপাতত তাঁকে থাকছে হচ্ছে, চিকিৎসকদের কড়া পর্যবেক্ষণে।