আবারও পুরপ্রধান বদলের জল্পনা দাঁইহাটে, নেপথ্যে বিজেপির লিড
নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচন(Loksabha Election 2024) হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার রাজনৈতিক অভিঘাত এখনও রয়ে গিয়েছে বাংলার(Bengal) রাজনীতিতে। রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান(Purba Burdwan) জেলার কাটোয়া মহকুমার(Katwa Sub Division) মধ্যে রয়েছে দাঁইহাট পুরসভা(Dnaihat Municipality)। এবারের লোকসভা নির্বাচনে সেই পুরসভা থেকেই প্রায় ৩ হাজার ভোটে লিড তুলেছে বিজেপি(BJP)। ঘটনা হচ্ছে, শুধু নয় দাঁইহাট, রাজ্যের অনেক পুরসভা এলাকা থেকেই লিড তুলেছে বিজেপি। কিন্তু দাঁইহাটে সেই লিডের জেরে এবার গদি ওল্টাতে পারে বর্তমান পুরপ্রধান প্রদীপ রায়ের। কেননা তৃণমূলের এই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে তাঁর দলের কাউন্সিলররাই অভিযোগ তুলেছেন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার। তাঁরা যে শুধু অভিযোগ তুলেছেন তাই নয়, রীতিমত পুরপ্রধানকে বয়কট করা শুরু করে দিয়েছেন। অবস্থা এমনই যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে তাঁরা চিঠি দিচ্ছেন পুরপ্রধান বদলের দাবি জানিয়ে। যদি সেই দাবি পূরণ না হয় তাহলে তাঁরা অনাস্থা আনার পথে হাঁটবেন বলেই জানা গিয়েছে।
দাঁইহাট পুরসভা মাত্র ১৪টি ওয়ার্ডের ছোট শহর। শেষ পুরনির্বাচনে সব ওয়ার্ডেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের(TMC) কাউন্সিলরা। এখন সেখানে পুরপ্রধান রয়েছেন প্রদীপ রায়। লোকসভা ভোটের পরে, বৃহস্পতিবার প্রথম পুরবোর্ডের বৈঠক ডেকেছিলেন পুরপ্রধান। কিন্তু তিনি-সহ মাত্র ৩ জন সদস্য হাজির হয়েছিলেন বৈঠকে। কোরাম না হওয়ায় শেষপর্যন্ত বৈঠক বাতিল করেন পুরপ্রধান। কেন এই বৈঠক বয়কট? কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, পুরসভার ১১জন কাউন্সিলরই কার্যত এককাট্টা এবং ক্ষুব্ধ পুরপ্রধানের ওপর। তাঁদের অভিযোগ, বিজেপি-কে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন প্রদীপ। সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসে পুরপ্রধান হয়েছেন প্রদীপ। কিন্তু অন্তর থেকে তৃণমূলী হয়ে উঠতে পারেননি। আর তাই তৃণমূলে থেকে তৃণমূলের পিঠেই ছুরি মারছেন তিনি। দলীয় পুর-সদস্যদের উপেক্ষা করে বিরোধীদের হয়ে কাজ করে চলেছেন। ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন। তাঁরা এর প্রতিবাদ করলেও উনি কথা শোনেননি। পুরপ্রধানের জন্যই নাকি দাঁইহাট পুরসভা এলাকায় লোকসভা নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে।
পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে সোচ্চার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি অসীম ঘোষ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি দলজিৎ মণ্ডল থেকে শুরু করে ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি কার্তিক সাহা ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি শুভ্রা ঢালি। তাঁদের দাবি, ‘পুরপ্রধানের জন্যই আজ শহরে বিজেপির ভোট বাড়ছে। পুরসভায় গেলে মনেই হয় না যে ক্ষমতায় তৃণমূল রয়েছে। ওঁর আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ।’ যদিও প্রদীপের দাবি ভিন্ন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসেছিলাম উন্নয়নের কাজ করব বলে। পদের জন্য নয়। ওদের বক্তব্য, আমি নাকি বিজেপির হয়ে কাজ করছি। দলের ক্ষতি হবে বলে ভোটের আগে এ নিয়ে কিছু বলিনি। কিন্তু, এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি, ওরা দলবিরোধী কাজ করে চলেছেন। আমি সরে যাওয়ার আগে ওদের সব দুর্নীতি ও দলবিরোধী কাজ সাংবাদিক বৈঠক করে বলে যাব। এ সব দলীয় নেতৃত্বকে আগেই জানিয়ে রেখেছি।’ এমতাবস্থায় প্রদীপের পাশে দাঁড়িয়েছেন দাঁইহাট শহর তৃণমূল সভাপতি রাধানাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘পুরপ্রধান বিজেপির হয়ে ভোটে কাজ করেছেন, এ কথা মানতে পারছি না। এ ভাবে আকচাআকচি না করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া উচিত পুর-প্রতিনিধিদের।’