বাংলায় মমতার নেই কোনও বিকল্প, মেনেই নিচ্ছে সঙ্ঘ
নিজস্ব প্রতিনিধি: সারসত্যিটা অনেক আগেই সামনে এসেছিল। সঙ্ঘই তা স্বীকার করেছিল। সেটা বছর দেড় আগেকার কথা। সঙ্ঘের মুখপত্রে স্বীকারই করে নেওয়া হয়েছিল বাংলায়(Bengal) নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) কোনও বিকল্প। কিন্তু তা মানতে চায়নি কেন্দ্রের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় থাকা নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার আর তাঁর দল বিজেপি(BJP)। কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেমন দেশের বুকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তেমনি বাংলাতেও কমেছে তাঁদের আসন। ঠিক এই রকম প্রেক্ষাপটে আবারও বিজেপির আঁতুরঘর হিসাবে চিহ্নিত রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ(RSS) এ রাজ্যের তাঁদের মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’য় আবারও প্রকাশিত করল এমন এক নিবন্ধ যা বলেই দিচ্ছে, বাংলার মাটিতে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কিছু নেই। কেন্দ্রের বিজেপির নেতারা যতবারই বঙ্গ ভ্রমণে আসুন না কেন, যতই তৃণমূলের নেতাদের পিছনে সিবিআই, ইডি, আইটি, এনআইএ লেলিয়ে দিন না কেন, শুভেন্দু অধিকারী থেকে দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার থেকে শান্তনু ঠাকুরকে যতই তোল্লা দিক না কেন, এরা কেউই মমতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারেননি, কাউকে মমতার বিকল্প হিসাবেও তুলে ধরতে পারেননি। আর বঙ্গ বিজেপির কাছে মমতার কোনও বিকল্প নেই বলেই বার বার প্রতিটি নির্বাচনে পদ্মশিবিরকে হারতে হচ্ছে জোড়াফুলের কাছে।
কার্যত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই পদ্মশিবিরকে একতরফা ভাবে বিঁধে চলেছেন সঙ্ঘের নেতারা। ভোটের আগে বিজেপি নেতৃত্ব যেভাবে প্রকাশ্যে সঙ্ঘের নেতাদের উপেক্ষা করে এসেছেন, সঙ্ঘের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে প্রচার চালিয়েছেন, সেই সব উপেক্ষা-অবজ্ঞাই এখন সঙ্ঘের তরফে ধেয়ে আসছ বিজেপির দিকে। হয়তো এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আর সেই নিয়মের পথে হেঁটেই ‘স্বস্তিকা’র নিবন্ধে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন এখনও বাংলার মাটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মুখ তুলে ধরতে পারল না বিজেপি নেতৃত্ব? বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেন এই খামতি পূরণ করছেন না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে মুখপত্রে প্রকাশিত শীর্ষ নিবন্ধে। সঙ্ঘের পর্যবেক্ষণ, মমতার সঙ্গে পাল্টা যোঝার মতো মুখ না-থাকা, সাংগঠনিক দুর্বলতা, গোষ্ঠী কোন্দল, অযোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের কারণেই একুশের বিধানসভা আর ২৪’র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ‘লেজেগোবরে’ হতে হয়েছে বাংলার মাটিতে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) কাছে। শুধু এই টাই নয়, সঙ্ঘের তরফে কার্যত বলেই দেওয়া হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে ২৬’র বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে গোহারান হারতে হবে তৃণমূলের কাছে।
লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হওয়ায় সঙ্ঘ নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে বিজেপির অন্দরে হস্তক্ষেপ বাড়াতে শুরু করেছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে বঙ্গ-বিজেপির নয়া সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সঙ্ঘের অভিমত নির্ণায়ক হতে পারে বলে পদ্ম-শিবিরের পর্যবেক্ষণ। তার আগেই এল বড় বার্তা। শুভেন্দু, সুকান্ত, দিলীপরা সহ বঙ্গ-বিজেপির প্রথম সারির কোনও নেতাই যে মানুষের কাছে মমতার বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে পারেননি, স্পষ্ট সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে সঙ্ঘ মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’র নিবন্ধে। রাজ্যে নির্বাচনী বিপর্যয় নিয়ে সেখানে লেখা হয়েছে, ‘এখনও মমতার কোনও যথার্থ বদলি মুখ বিজেপিতে নেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এই খামতি কেন বাঁচিয়ে রাখছেন? বারবার ফায়দা তুলছেন মমতা!’ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে প্রচার করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলায় বিজেপির প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু শুভেন্দুও মমতার বিপরীতে সমান গ্রহণযোগ্য মুখ হতে পারেননি বলেই সঙ্ঘের নিবন্ধে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।