অমিতাভের নজরদারিতেই হবে পর্যালোচনা বৈঠক, বঙ্গ বিজেপির রাশ হাতে নিচ্ছে সঙ্ঘ
নিজস্ব প্রতিনিধি: তখনও লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়নি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বেশ আত্মগর্বে জানিয়ে দিলেন, বিজেপির আর সঙ্ঘকে কোনও প্রয়োজন নেই। সঙ্ঘ ছাড়াই চলতে পারবে বিজেপি(BJP)। ভোটের পরে ভেসে ওঠা ছবি বলছে, দেশের মানুষের কাছে ঘাড়ধাক্কা খাওয়া, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো বিজেপি ফের ফিরছে সঙ্ঘের ছত্রছায়ায়। এবারের লোকসভা নির্বাচনে দেশের যে সব রাজ্যে বিজেপির আসন কমেছে, তার মধ্যে আছে বাংলাও(Bengal)। ১৮ কমে হয়েছে ১২। এই অবস্থায় দলের ফল কেন খারাপ হল সেটা খুঁজে বের করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলের ৫টি সাংগঠনিক জোনে এই নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক(Review Meeting) হবে। আর সেই বৈঠক হবে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর(Amitabh Chakrabarty) নজরদারিতে। ভুললে চলবে না এই অমিতাভ কিছু সঙ্ঘের লোক। অর্থাৎ বঙ্গ বিজেপিতে ফিরছে সঙ্ঘের(RSS) নিয়ন্ত্রণ। কার্যত দলের রাশ তাঁরা এবার তাঁদের হাতে তুলে নিতে চলেছেন।
নরেন্দ্র মোদির জমানার প্রথম দুই দফায় অর্থাৎ প্রথম ১০ বছরে দিন যতই গড়িয়েছে ততই সঙ্ঘের আধিপত্য কমেছে বিজেপির অন্দরে। সঙ্ঘকে এড়িয়ে একতরফা ভাবে মোদি সরকার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে গিয়েছে। বাংলার বুকেও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব সঙ্ঘকে গুরুত্ব দেওয়া কমিয়ে দিয়েছিল। এমনকি অমিতাভের বিরুদ্ধে শহর কলকাতায় পোস্টার পড়েছিল, ‘অমিতাভ হঠাও, বিজেপি বাঁচাও’। এবার সেই অমিতাভের নজরদারিতেই কিনা হবে দলের পর্যালোচনা বৈঠক। আসলে এই ছবিই বলে দিচ্ছে, বঙ্গ বিজেপির রাশ এবার নিজের হাতে তুলে নিতে চলেছে সঙ্ঘ। আর যে যা খুশি, যেমন খুশি করতে পারবে না। সব কিছু আর একজনের ইচ্ছায় হবে না। তা সে আদি নেতা হোন, কী নব্য নেতা। গতকাল অর্থাৎ শনিবার রাতে কলকাতায় বসেছিল বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠক। সেখানে কিন্তু ছিলেন না অমিতাভ। তবে ছিলেন দলের ৪ রাজ্য পর্যবেক্ষক। সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য ও আশা লাকড়া। আর সেই বৈঠকেই জানিয়ে দেওয়া হয় দলের ফল নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হবে অমিতাভের নজরদারিতে। কার্যত বার্তা স্পষ্ট, বঙ্গ বিজেপিতে এবার সব কিছুই হবে সঙ্ঘের নজরদারিতেই। দল এবার আর কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হবে না। লক্ষ্যণীয় ভাবে গতকালের বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী না থাকলেও ছিলেন সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar) ও দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh)।
বৈঠক প্রসঙ্গে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের দাবি, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভোট বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে সাংগঠনিক স্তরে সমীক্ষা চালিয়ে বিশ্নেষণ করা হবে। রাজ্য দফতরে বসে সেই সমীক্ষা বা বিশ্লেষণ চালানো হবে না। বাংলায় বিজেপির পাঁচটি সাংগঠনিক জ়োন রয়েছে। সেগুলি হল— উত্তরবঙ্গ, নবদ্বীপ, রাঢ়বঙ্গ, কলকাতা এবং হাওড়া-হুগলি-মেদিনীপুর। এই পাঁচটি জ়োনে আলাদা আলাদা ভাবে সমীক্ষা চালিয়ে বিপর্যয়ের কারণ খোঁজা হবে। সাংগঠনিক জ়োনের বৈঠকে ডাকা হবে সংশিষ্ট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের। বৈঠকে থাকতে পারেন জেলা সভাপতিরা। এ ছাড়াও প্রত্যেকটি বিধানসভা এবং লোকসভার ইনচার্জদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা। সেই বৈঠকেই বিপর্যয়ের পর্যালোচনা করা হবে। বিপর্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ কারণ খুঁজতে জেলায় জেলায় গিয়ে নেতা, কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। জেলায় জেলায় সাংগঠনিক পদেও রদবদল আনা হতে পারে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘যারা নীচুতলায় লড়াই করে পার্টিটা করেন, এবার সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে বিপর্যযের কারণ জানা হবে। সেজন্যই জেলায় জেলায় গিয়ে সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত। সাংগঠনিক জোনের অধীনেই জেলায় জেলায় বিপর্যয়ের কারণ খোঁজা হবে। পুরো বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অমিতাভ চক্রবর্তীকে। বৈঠকে প্রার্থীদের পাশাপাশি জেলা এবং মণ্ডল নেতৃত্বকেও ডাকা হবে।’