CAA নিয়ে প্রশ্ন ঘুরছে মতুয়া মহলে, খালি কারও কাছে নেই কোনও উত্তর
নিজস্ব প্রতিনিধি: ওপার বাংলা(Bangladesh) থেকে এপার বাংলায় আসা মতুয়া সমাজের(Matua Society) মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন তাঁদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে। কিন্তু চলতি বছরে কেন্দ্র সরকার বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু নাগরিকদের জন্য নাগরিকত্ব প্রদানের যে পদ্ধতি চালু করেছে তা নিঃশর্ত নয়। এই নিয়ে মতুয়া সমাজ বেশ ক্ষুব্ধ কেন্দ্রের ওপরে। ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে, বাংলার ৯০ শতাংশ মতুয়াই নাগরিকত্বের জন্য কোনও আবেদনই করেননি। আর যারা করেছিলেন তাঁদের আবেদন হয় এখনও জমে আছে বা তা বাতিল করা হয়েছে প্রয়োজনীয় নথির অভাবে। এই আবহে চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে ৭-৮জনকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এদের প্রায় সকলেরই আগে থেকে ভোটার কার্ড রয়েছে, আধার কার্ড রয়েছে, প্যান কার্ডও রয়েছে। আর তা দেখেই মতুয়া সমাজে এখন বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে যার উত্তর আপাতত কারোর কাছেই নেই। না কোনও প্রশাসনিক আধিকারিকের কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর আছে, না কোনও রাজনৈতিক নেতার কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর আছে।
জানা গিয়েছে চলতি সপ্তাহে Citizenship Amendment Act, 2019 বা CAA’র মাধ্যমে যে ৭-৮জন নাগরিকত্ব পেয়েছেন তাঁরা সকলেই বাংলাদেশের Citizenship Document জমা করেছেন। সেই সুবাদেই এদেশের সরকার তাঁদের নাগরিউকত্ব দিতে পেরেছে। কিন্তু এখন মতুয়া সমাজের প্রশ্ন, বাংলাদেশের Citizenship Document কতজনের কাছে আছে? কতজনই বা তা জমা দিতে পারবে? ঘটনা হচ্ছে, বাংলাদেশের Citizenship Document না থাকার জন্য নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা মানুষেরা স্থানীয় পোস্ট অফিসের CAA Verification Center গিয়েও ফেরত এসেছেন। বলা ভাল, তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মতুয়াদের প্রশ্ন, শুধু তাঁরাই নন, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং নদিয়ার বুকে কয়েক কোটি হিন্দু উদ্বাস্তু আছেন। তাঁদের কয়জনের কাছে বাংলাদেশের Citizenship Document আছে? তাঁদের মধ্যে থেকেই বা কতজন আবেদন করেছেন নাগরিকত্বের জন্য? তথ্য বলছে, দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া ও কলকাতা মিলিয়ে মাত্র ৪০০জনের মতো মানুষ নাগরিকত্বের জন্য এখনও পর্যন্ত আবেদন জানিয়েছেন।
মতুয়া সমাজের প্রশ্ন, যেখানে মানুষ আছেন কয়েক কোটির কাছাকাছি সেখানে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন এত কম কেন? যদি তাঁরা বিনা আবেদনেই এদেশের নাগরিকত্ব বিনা শর্তে পেয়ে থাকেন তাহলে তাঁদের জন্য কেন শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব প্রদান করা হচ্ছে? আর যদি ওই বিশাল সংখ্যক মানুষ বিনা আবেদনেই এদেশে থেকে যেতে পারেন, তাহলে তাঁরাই বা থাকতে পারবেন না কেন? মজার কথা যারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁদের অধিকাংশের কাছেই বাংলাদেশের কোনও Citizenship Document নেই। এর পাশাপাশি প্রশ্ন ঘুরছে, যারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করল, নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে হলফনামা জমা দিল, কিন্তু CAA-তে আবেদন করেও যাদের তা প্রত্যাখ্যাত হল তাঁদের ভবিষ্যত কি? তাঁদের আইনগত পরিভাষা কী হবে? বৈধ নাগরিক নাকি অনুপ্রবেশকারী? আবেদনের পরে তো সে আর ভারতের নাগরিক হিসাবে চিহ্নিতই তো হবে না আর। আবেদন প্রত্যাখান হলে তাঁরা তখন কোথায় যাবে? কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো আপাতত কেউ নেই।