সৌমিত্র তৃণমূলে ফিরুক, চাইছেন না সুজাতা, দূরত্ব বাড়াচ্ছে বিজেপি
নিজস্ব প্রতিনিধি: এবারের লোকসভা নির্বাচনে নামমাত্র ভোটে জয়ী হয়েছেন রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার(Bankura District) বিষ্ণুপু্রের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ(Soumitra Khan)। ৬ হাজারেরও কম ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। আর জেতার পর থেকেই তিনি লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন বিজেপির(BJP) রাজ্য নেতৃত্বকে। একইসঙ্গে প্রশংসা করে চলেছেন তৃণমূলের। এহেন পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, সৌমিত্রের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু এবার সেই প্রত্যাবর্তনের পথে কিছুটা হলেও কাঁটা বিছিয়ে দিলেন তাঁরই প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল(Sujata Mondol)। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবার তৃণমূল(TMC) সুজাতাকেই প্রার্থী করেছিল সৌমিত্রের বিরুদ্ধে। সুজাতা হেরেছেন নামমাত্র ভোটে। কিন্তু সৌমিত্রের তৃণমূলমুখো আচরণ দেখেই এখন সেই সুজাতাই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, শুধু সুজাতাই নয়, বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের একটা বড় অংশই চান না সৌমিত্র তৃণমূলে ফিরুক। তবে এ বিষয়ে ‘রাজ্য নেতৃত্ব’র নিষেধাজ্ঞা থাকায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা তৃণমূল নেতারা।
সৌমিত্রের সাম্প্রতিককালের ভোলবদল এখন রাজ্য রাজনীতির ময়দানে বেশ জোরালো আলোচনা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাড়ার চায়ের ঠেক থেকে তৃণমূলের অন্দরেও জোর জল্পনা চলছে। ভোট মিটতেই সৌমিত্র বেসুরো হয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, ৩ দফার সাংসদকে কেন্দ্রে মন্ত্রী না করায় গোঁসা হয়েছে সৌমিত্রের। সেই সঙ্গে দল তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ পদ না দেওয়াতেও তিনি অখুশি। তিনি এখন চাইছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদ। যদিও সেই পদ মেলার কোনও সম্ভাবনাই নেই। এই অবস্থায় তিনি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে লাগাতার আক্রমণ করার পাশাপাশি গুণগান করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যা থেকে তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই প্রত্যাবর্তনের ঘটনায় সাফ নারাজ সুজাতা। তাঁর দাবি, ‘তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশকে হাত করে অন্যায় ভাবে সৌমিত্র জিতেছেন। নিজের যোগ্যতায় তিনি জেতেননি বলে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে পাত্তা দিচ্ছেন না। গাড্ডায় পড়ে তাই তৃণমূলের সুনাম করছেন। এটা সৌমিত্রর চালাকি ছাড়া কিছু নয়। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবর্জনাকে গুরুত্ব দেন না। গুরুত্ব দেবেন না বলেও আশা রাখি।’
ঘটনা হচ্ছে শুধু সুজাতা নন, বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের একটা বড় অংশই চান না সৌমিত্র তৃণমূলে ফিরুক। এই প্রসঙ্গে জেলারই বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘সৌমিত্র নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে যতটা নোংরা ভাষায় আক্রমণ করতেন, এখন ততটাই ভদ্র ভাষায় সুনাম করছেন। ওকে দলে নেওয়া, না নেওয়া এ সব শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়।’ সৌমিত্র ২০১১ সালে কংগ্রেসের কোতুলপুরের বিধায়ক হয়ে ২০১৪-তে তিনি তৃণমূলে যান। ওই বছরেই তিনি তৃণমূলের বিষ্ণুপুরের সাংসদ হন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তারপরেই বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে বিজেপির সাংসদ হন। এ বার বিজেপির টিকিটে জিতলেও ফল প্রকাশের পরের দিনই তিনি অভিষেকের ভোট কৌশলের প্রশংসা করেন। শুধু তাই নয়, বিষ্ণুপুরের উন্নয়নে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সাক্ষাৎ চান, এমনটাও জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা আটকে দিয়ে রাজ্য বিজেপি ভুল করেছে বলেও অভিযোগ করেন। তাঁর এহেন বেসুরো অবস্থানই যাবতীয় জল্পনার জন্ম দিয়েছে। তবে সৌমিত্রের এই বেসুরো অবস্থান দেখে এখন পদ্মশিবির তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে দিয়েছে। সূত্রের দাবি, দলবিরোধী কার্যকলাপ ও মন্তব্যের জেরে তাঁকে চিঠি পাঠানো হতে পারে বঙ্গ বিজেপির তরফে।