বোসকে সুপ্রিম নোটিস, জবাব দিতে হবে ৪ সপ্তাহের মধ্যে
নিজস্ব প্রতিনিধি: মোদি জমানায় বারে বারে চোখে পড়েছে দেশের একাধিক অবিজেপি শাসিত রাজ্যে সেখানকার রাজ্যপালরা(Governor) কার্যত সেখানকার নির্বাচিত রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন। পদ্মের অঙ্গুলিহেলনে কার্যত পদ্মপাল হয়ে তাঁরা পদে পদে সেই সব অবিজেপি রাজ্যে প্রশাসনিক স্তরে নানা বাধা বিপত্তি খাড়া করে দিচ্ছেন। নানা বিষয়ে সেখানকার রাজ্য সরকারের আর্জি, সুপারিশ মায় বিল পর্যন্ত খারিজ করে দিচ্ছেন বা তা আটকে রাখছেন কিংবা তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাচ্ছেন। এর ফলে ওই সব রাজ্যে প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক জটিলতাও দেখা দিচ্ছে। ওই সব অবিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলির তালিকায় কার্যত শীর্ষে রয়েছে বাংলা(Bengal)। এবার এখানকার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে(C V Anand Bose) এই ধরনের কাজের জন্য নোটিস ধরালো সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)। দেশের শীর্ষ আদালত থেকে রাজভবনে নোটিস(Notice) পাঠানো হয়েছে এবং আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সাংবিধাবনিক ভাবে রাজ্যপাল পদটি রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিত্ব করে। কেননা কেন্দ্রের সুপারিশে দেশের রাষ্ট্রপতিই তাঁকে নিয়োগ করেন। একই সঙ্গে রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। কিন্তু তিনি যেমন রাজ্যের মানুষের দ্বারা নির্বাচিত শাসক নন, তেমনি প্রশাসনিক প্রধানও নন। রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হলেও প্রশাসনিক প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বের সরকার সরাসরি জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েই গঠন হয়। কিন্তু এ রাজ্যে প্রথমে জগদীপ ধনখড় এবং পরে সি ভি আনন্দ বোসের ক্ষেত্রে দেখে যাচ্ছে তাঁরা নিজেরা এমন সব কাজ করছেন, সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, পদক্ষেপ করছেন, যা দেখলে মনে হবে, তাঁরাই যেন বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, জনগণের নির্বাচিত ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চলা সরকার নয়, রাজ্যপালরাই রাজ্যের প্রধান শাসক। শুধু তাই নয়, বোস এ রাজ্যে রাজ্যপাল হয়ে আসার পরে বহু ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিল আটকে দিয়েছেন যা বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরে তাঁক কাছে পাঠানো হয়েছিল সই করে দেওয়ার জন্য। রাজ্যপাল হিসাবে বোস সেই সব বিলে সই তো করেনইনি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সেই সব বিল তিনি হয় আটকে রেখেছেন নয়তো তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এই অবস্থায় বোসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলার সূত্রেই এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালার বেঞ্চ বোসকে নোটিস পাঠিয়েছে কেন তিনি রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া বিল আটকে রেখেছেন বা তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়েছেন তা আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে জানাতে হবে। উল্লেখ্য, গত বছরই সুপ্রিম কোর্ট কেরল, তামিলনাড়ু ও পঞ্জাবের রাজ্যপালদের তীব্র ভর্ৎসনা করে। সেই সময়েই দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, রাজ্যপাল পদটি সাংবিধানিক পদ। সেই পদের গরিমা রক্ষা করে চলা উচিত রাজ্যপালদের। ওই পদে বসে রাজনীতি করা অনুচিত এবং এটা মাথায় রাখতে হবে তাঁরা জনগণ নির্বাচিত শাসক নন। সরকার চালানো তাঁদের কাজ নয়। নির্বাচিত সরকারই সেখানকার শাসক এবং তাঁদের আর্জি মেনে রাজ্যপালকে কাজ করতে হবে। কিন্তু বাংলার রাজ্যপাল সেই সুপ্রিম নির্দেশকে ভ্রুক্ষেপের মধ্যে আনেননি এবং রাজ্য সরকারের পাঠানো একের পর এক বিল আটকে রেখে দেন। এবার সেই সূত্রেই তিনি পেলেন সুপ্রিম নোটিস।