কাটল বিভ্রান্তি, অভিষেকের বক্তব্যকেই মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী(Chief Minster of Bengal) তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) দিল্লি সফরের সঙ্গী হচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। আগামী ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী মহাজোট INDIA’র যে বৈঠক হবে তাতে মমতার সঙ্গে থাকবেন অভিষেকও। কেননা তিনি জোটের সমন্বয় কমিটির সদস্য। আবার সাংসদ হিসাবে অভিষেক মমতাকে সঙ্গে দেবেন ২০ তারিখ দিল্লির নয়া সাংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে। এদিন অর্থাৎ রবিবার দুপুরে দুইজনে একসঙ্গেই রওয়ানা দেবেন দিল্লির পথে। সেই সফরের আগেই অভিষেকের দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের(Supreme Court) রায় নিয়ে বিভ্রান্তি কেটে গেল। নানা সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছিল, দেশের শীর্ষ আদালত ধাক্কা দিয়েছে তৃণমূলের সেনাপতিকে। কিন্তু শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের পোর্টালে ওই রায়ের কপি আপলোড হওয়ায় সেই দাবি মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট অভিষেকের দাবিকেই মান্যতা দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় সামনে আসার পর গত শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লেখেন, ‘অভিষেক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ১) বিচারপতিরা মামলা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বিচ্ছিন্ন মন্তব্য করতে পারবেন না। ২) নজরদারির নামে তদন্তে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। ইডি নিয়মমতো কাজ করবে। ৩) মামলা সংক্রান্ত ভুল, বিভ্রান্তিকর রিপোর্টিং করা যাবে না।’ কিন্তু নানা সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয় সুপ্রিম কোর্ট নাকি অভিষেকের দুটি আর্জিই খারিজ করেছে। তাঁকে ধাক্কা দিয়েছে। যদিও শনিবার রাতে দেখা গেল, যা রটেছে তার উল্টোটাই ঘটেছে।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি এস ভি এন ভাট্টির বেঞ্চে অভিষেকের আইনজীবী গোপালকৃষ্ণণ আইয়ার ওই মামলার শুনানিকালে জানিয়েছিলেন, কলকাতা হাইকোর্টের এক মহিলা বিচারপতি এমন কিছু পর্যবেক্ষণ রাখছেন, যা Enforcement Directorate বা ED’র আইনজীবীও বলছেন না। দুর্নীতি, বিশাল সম্পত্তির মতো কথা উঠে আসছে তাঁর পর্যবেক্ষণে। যেগুলি হাতিয়ার করে বিরোধী নেতারা ট্যুইট করছেন। চলছে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’। এই সময় তিনি ‘সাহারা বনাম সেবি’ মামলার উল্লেখ করে আদালতে অনুরোধ করেন, যেন মিডিয়ার প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেয় আদালত।
বেঞ্চ চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বরের এবং ৫ অক্টোবরের ডিভিশন বেঞ্চের রায় উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে বলেছে, সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারককে মনে রাখতে হবে যে তদন্ত চলাকালীন যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তাঁদের কারও বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না। মনে রাখতে হবে যে তলব করা ব্যক্তিদের কারও বিরুদ্ধে কোনও প্রতিকূল পর্যবেক্ষণ তাঁদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। আদালত আরও বলেছে, এটি নিশ্চিত করা হবে যে তদন্তকারী সংস্থা সমস্ত প্রয়োজনীয় এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে আদালতে জমা করবে এবং তদন্তের ফলাফলের বিষয়ে আইনে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করবে।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ প্রদেয় রায়ে, অতীতের ৬টি মামলার উল্লেখ করেছে। যেসব রায়ে বলা হয়েছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত তদন্ত কোনও আইন বা ধারা লঙ্ঘন করছে, ততক্ষণ আদালতের পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। তদন্তের সমস্ত দিক বিচারবিভাগ দূরে থাকবে এবং পুলিশি ডায়েরির তথ্য বা তদন্তে পাওয়া বয়ান আদালত প্রকাশ করতে পারে না। এমন কোনও পর্যবেক্ষণ আদালত দেবে না যা তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। সবশেষে বিচারপতি খান্না মনে করিয়ে দেন, সেবি বনাম সাহারা মামলায় মিডিয়া ট্রায়াল সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশ এখনও সব ক্ষেত্রেই বহাল। একইসঙ্গে আদালত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের বক্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে জানানোর নির্দেশও দিয়েছে।