রাজ্যের দেওয়া ৪৬৮ কোটি টাকাতেই বাংলায় চলছে সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্প
নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার বাংলার(Bengal) জন্য যাবতীয় সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে দিলেও সেই সব প্রকল্পের কাজ যে বাংলায় থমকে গিয়েছে তা কিন্তু নয়। রাজ্য সরকার তার নিজস্ব কোষাগার ও বাজেট থেকে ওই সব প্রকল্পের জন্য অর্থবরাদ্দ করে সেই সব প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে উপকৃত হচ্ছেন বাংলার জনতা। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার সমগ্র শিক্ষা মিশন বা SSM’র টাকাও আটকে দিয়েছে। কিন্তু তা বলে বাংলার বুকে সমগ্র শিক্ষা মিশনের কাজ থমকে গিয়েছে, এটা কিন্তু একদম নয়। বরঞ্চ সেই সব প্রকল্প রাজ্যের সব জেলায় যেমন চলার তেমনই চলছে। কেননা রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার এই প্রকল্পের জন্য গত ৮ মাস ধরে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ করে চলেছে। সেই সুবাদে সমগ্র শিক্ষা মিশন খাতে বিগত ৮ মাসে রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছে ৪৬৮ কোটি টাকা(468 Crore Rupees)। সেই টাকাতেই খুদে পড়ুয়াদের মিড ডে মিল থেকে স্কুলশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ করা হচ্ছে।
দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি এবং জম্মু-কাশ্মীর ছাড়া অন্য সব রাজ্যেই সমগ্র শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দ অর্থের অনুপাত ৬০:৪০। কিন্তু গত ৮ মাস ধরে কেন্দ্র নিজের ভাগের ৬০ শতাংশ টাকা না দেওয়ায় রাজ্যের বুনিয়াদি স্তরের শিক্ষা পরিকাঠামোয় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। গত বছর অক্টোবর মাস থেকে Prime Minister's Schools for Rising India বা PMSRI প্রকল্পে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য মউ সই না করায় কেন্দ্র সরকার বাংলার জন্য সমগ্র শিক্ষা মিশনের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্য পায় প্রতি বছর ২০০০ কোটি টাকা। যা নিয়ে চিঠিও দিয়েছে নবান্ন। কিন্তু সেই চিঠির কোনও জবাবই আসেনি। টাকাও আসেনি। ওই টাকাতেই স্কুলে স্কুলে পরিকাঠামো উন্নয়নের যাবতীয় কাজ হয়। সেই সব কাজের মধ্যে আছে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি, অতিরিক্ত ক্লাসঘরের বন্দোবস্ত, স্কুল মেরামত, পাঁচিল দেওয়া, শৌচাগার নির্মাণ ও পানীয় জল সরবরাহের মতো নানা ধরনের কাজ। তা ছাড়া, রাজ্য জুড়ে স্কুল, শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে কর্মরত পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু, শিক্ষা সহায়ক ও সম্প্রসারক, স্পেশাল এডুকেটর-সহ চুক্তি-ভিত্তিক লক্ষাধিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন বা ভাতাও মেটানো হয় সমগ্র শিক্ষা মিশনের টাকায়।
এমনকী, লোকসভা ভোট ঘোষণা হওয়ার আগে, রাজ্য প্রশাসন ১ মার্চ সরকারি বিভিন্ন দফতরে কর্মরত ক্যাজুয়াল ও চুক্তি-ভিত্তিক গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা করেছিল। অন্যান্য সরকারি দফতর ও সরকারের অধীন স্বশাসিত সংস্থায় ওই ঘোষণা মতো কাজ হলেও স্কুলশিক্ষা দফতর ও তার অধীন বিভিন্ন স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, State Council for Education Research and Training বা SCERT, বিকাশ ভবন, বিভিন্ন জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিসে কর্মরতদের চুক্তি-ভিত্তিক কর্মীদের বেতন বা ভাতা বাড়ানোর ব্যাপারটা থমকে আছে। তার জেরে ওই সব সংস্থার কর্মীদের মধ্যে কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তার আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সব চেয়ে উদ্বেগে রয়েছেন বিকাশ ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মী ও আধিকারিকরা। তাঁরা দফায় দফায় সমগ্র শিক্ষা মিশন দফতরে বেতন সংক্রান্ত দাবিসনদও জমা দিয়েছেন। ফলে, এ ক্ষেত্রে মিড ডে মিলের মতোই লক্ষাধিক কর্মীর বেতন ও ভাতা খাতে ভরসা বলতে রাজ্যের ৪০ ভাগ অর্থই। রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ, কেন্দ্র বার বার পিএমশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে স্কুলশিক্ষার অন্যান্য প্রকল্পকে জুড়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের ফরমান পিএমশ্রী প্রকল্পের স্কুলগুলো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবেই চলবে, কিন্তু ওই প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ব্যয় রাজ্যকেই বহন করতে হবে। সে জন্য বিভিন্ন রাজ্য বেঁকে বসেছে।