স্বাস্থ্যসাথীতে দুর্নীতি ঠেকাতে ৩ নয়া নির্দেশিকা জারি রাজ্যের
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) মানুষকে নিখরচায় উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) চালু করেন স্বাস্থ্যসাথী(Swasthasathi) প্রকল্প। সেই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত চলে এসেছেন রাজ্যের প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ। আওতায় এসেছে ২৪০০ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল তথা নার্সিংহোম। রাজ্যের প্রায় ৭৬ লক্ষ মানুষ এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু তারপরও স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। সেই দুর্নীতি ঠেকাতে এবার রাজ্য সরকার ৩টি নয়া নির্দেশিকা জারি করে দিল। সেখানেই বলে দেওয়া হয়েছে, এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ১০ দিনের বেশি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেই হবে Medical Audit। সেই অডিট করবেন ২৫ জন বিশেষজ্ঞের টিম। তাঁরা কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে ঘটনাগুলি পাঠানো হবে বিভাগীয় সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে ক্যান্সার চিকিৎসার(Cancer Treatment) ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসার ভিডিও ও ছবি পাঠানো আবশ্যক।
রাজ্য সরকারের এহেন পদক্ষেপ কেন? নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে মূলত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে দুর্নীতি ঠেকাতেই মুখ্যমন্ত্রী এই ৩ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই নির্দেশ মেনেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর পদক্ষেপ করছে। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর কানে গিয়েছে যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নেওয়া এবং সেই চিকিৎসার টাকা আদায় নিয়ে নানা চক্র সক্রিয়া হয়ে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের ইন্ধনে। কেননা লাভের বখরা তাঁরাও পাচ্ছিলেন। তাই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্নীতিহীন ভাবে রাজ্যের আমজনতা যাতে চিকিৎসা পরিষেবা পান তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের প্রাপ্য আরও বেশি করে সুনিশ্চিত করতে চাইছেন। কেননা এই প্রকল্পের সঙ্গে রাজ্যবাসীর বাঁচা-মরার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে।
নয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে আর কেউ ১০ দিনের বেশি হাসপাতালে থাকতে পারবেন না। ১০ দিনের বেশি ভর্তি থাকলে সেইসব কেসে কেন রোগী ১০ দিনের বেশি ভর্তি আছেন তা খতিয়ে দেখবেন স্বাস্থ্য দফতরের আমাদের ২৫ জন বিশেষজ্ঞের টিম। তাঁরাও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে ঘটনাগুলি পাঠানো হবে বিভাগীয় সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে। একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবার থেকে রাজ্যের কোনও বেসরকারি হাসপাতাল না নার্সিংহোম বিনা সার্জারির রোগীকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অকারণে ভর্তি করিয়ে রাখতে পারবে না। একই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথীতে কোনও রোগীকে একবারে ভর্তি করিয়ে দু’টি অপারেশন করা হলে, বেশি খরচের অপারেশনে তিনি পুরো অর্থটাই সরকার থেকে পাবেন। আর পাবেন দ্বিতীয় অপারেশনের ৬০ শতাংশ খরচের টাকা। বাকি ৪০ শতাংশ তাঁকে দিতে হবে। একই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যসাথীতে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় হাসপাতালকে সেই ভিডিও পাঠাতে হবে। রেডিওথেরাপির সময় পাঠাতে বলা হয়েছে বেডে শুয়ে থাকা রোগীর ছবি।