CAA নিয়ে TMC’র প্রচার কৌশল সফল, দাবি ভোট বিশেষজ্ঞদের
নিজস্ব প্রতিনিধি: ভারতের মতো দেশে যে কোনও নির্বাচনে প্রচার কৌশলই রাজনৈতিক দলের কাছে অন্যতম হাতিয়ার। রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা বলে থাকেন, ভোট ময়দানে প্রচারের কৌশলের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। যারা যত ভালো প্রচার করতে পারে, তারা তত মানুষের মাঝে, মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। এবারের অষ্টাদশ লোকসভা নিবার্চনে Citizenship Amendment Act, 2019 বা CAA নিয়ে বাংলার বুকে প্রথম থেকেই একটা হাওয়া উঠেছিল। গেরুয়া শিবির ছিল এই আইনের পক্ষে, তৃণমূল সহ কংগ্রেস ও বামেরা ছিল এই আইনের বিপক্ষে। কিন্তু এখন ভোটের প্রচার যখন শেষ হয়ে গিয়েছে তখন ভোট বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, CAA নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC) যে প্রচার কৌশল অবলম্বন করেছিল তা আমজনতার মধ্যে বেশ ভাল প্রভাব ফেলেছে। এর সুফল এই নির্বাচনে পাবে জোড়াফুল শিবির। অন্যদিকে এই আইনকে হাতিয়ার করে যে গেরুয়া শিবির বাংলায় ভাল ফল করবে ভেবেছিল, তাঁরা কিন্তু প্রচারে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূলের থেকে। ভাল ফল তাঁরা পাবে কিনা সেটা সময়ই বলবে।
CAA নিয়ে তৃণমূল কী প্রচার করেছে? গত ৩-৪ মাস ধরে আমরা দেখলাম তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) এক সুরে বার বার নিয়ম করে প্রতিটি জনসভায় বলে গিয়েছেন, ‘CAA হল NRC-র প্রথম ধাপ। CAA হল জুমলা। CAA মানে জালে জড়িয়ে পড়া। CAA হলে আপনাদের Detention Camp-এ গিয়ে থাকতে হবে। অসমের দিকে তাকিয়ে দেখুন। সেখানে বহু হিন্দু পরিবার ক্যাম্পে রয়েছে।’ এই প্রচার মতুয়া সম্প্রদায়ের একদম নীচুতলা অবধি তৃণমূলকে পৌঁছে দিয়েছে। ভোট বিশেষজ্ঞদের দাবি, শুধু নন মতুয়ারা, যে সব হিন্দু পরিবার বাংলাদেশ থেকে এদেশে চলে এসে এসেছেন বা চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা মুসলিমদের কার্যত সহ্যই করতে পারেন না। স্বভাবতই তাঁরা তৃণমূলের সংখ্যালঘু নীতি মেনে নিতেও পারেন না। কিন্তু তাঁরা বিজেপিকে এই ইস্যুতে বেশ পছন্দ করে এসেছেন। সেই সূত্রেই দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনদের মধ্যে বিজেপির প্রতি ভোট দেওয়ার ঝোঁক রয়েছে। তাই এবারেও ওই ভোট যে বিজেপির দিকেই যাবে এমনটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভোট বিশেষজ্ঞদের দাবি, তা এবার হয়নি। আর তার নেপথ্যে কাজ করেছে CAA। কার্যত এই আইন গেরুয়া শিবিরের কাছে ব্যুমেরাং হয়েছে।
ভোট বিশেষজ্ঞদের দাবি, তৃণমূল যেভাবে CAA নিয়ে লাগাতার রাজ্যজুড়ে প্রচার চালিয়ে গিয়েছে, সেই আইন নিয়ে মতুয়া নন বা মুসলিম নন এমন নাগরিকদেরও যেভাবে সচেতন করে তুলতে পেরেছে তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি এই আইনের স্বপক্ষে বিজেপির হরেক কিসিমের দাবিদাওয়া বা প্রচার। কার্যত তৃণমূলকে সেভাবে কাউন্টারই করতে পারেনি বিজেপি। পদ্ম শিবিরের নেতারা বার বার বলেছেন, CAA নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, অধিকার কাড়ার আইন নয়। কিন্তু সেই দাবি বা কথা আমজনতা গ্রহণ করতে পারেননি। তাঁরা বিশ্বাসও করেননি। কেননা, যারা নথি দিতে পারবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কী হবে, সে সম্পর্কে তাঁরা বুঝিয়ে বলতে পারেননি। তাছাড়া NRC হবে কী হবে না, CAA-র সঙ্গে NRC-র কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, এমনকি বাংলায় NRC লাগু হবে কী হবে না, তা নিয়ে মোদি-শাহরা কোনও গ্যারেন্টি দিতে পারেননি। এর জেরে ভোট বাক্সে ফায়দা তুলেছে তৃণমূল। ভোট বিশেষজ্ঞদের এই সব দাবি সঠিক না বেঠিক তা আগামী ৪ জুন পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে এটাও ঘটনা যে, বহু পদ্মনেতা কার্যত একান্তে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, ভোটের মুখে CAA লাগু না হলেই ভালো হতো। অনেকেই এর সঙ্গে NRC’র যোগ খুঁজে পাচ্ছেন। তৃণমূলের দাবিকে মানুষকে গ্রহণ করেছে।