মাছে ভাতে থাকা বাঙালিকে মাছের যোগান দিতে ২৮ হাজার মৎস্যচাষীকে প্রশিক্ষণ
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাঙালির(Bengali People) পাতে মাছ(Fish) থাকবে না তা কী হয়! কখনই নয়। কারও পাতে রোজ মাছ চাই, তো কারও পাতে এক দুইন অন্তর অন্তর। কেননা বাঙালি বেঁচেই আছে তো মাছে-ভাতে। অথচ সেই মাছের যোগান নিয়ে সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। বাংলার(Bengal) চাহিদা অনুযায়ী মাছের উৎপাদনে এখনও স্বনির্ভর হতে পারেনি রাজ্য। সেই খরা কাটাতে এবার পদক্ষেপ করছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। রুই-কাতলার মতো মাছের জন্য যাতে অন্ধ্রপ্রদেশ বা দক্ষিণ ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা ও নির্দেশমাফিক রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ব্লকে মৎস্যজীবীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ(Training) দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের মৎস্য দফতর(Department of Fisheries)। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় যে বড় পুকুর বা জলাশয় রয়েছে, সেগুলিতে কী কী পরিকাঠামো গড়লে মাছের উৎপাদন বাড়ানো যাবে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ২৮ হাজার মৎস্যজীবীকে(Fishermen) এই প্রশিক্ষণ দিতে চলেছে মৎস্য দফতর।
মাছ চাষে বাংলা অগ্রণী ভূমিকা নিলেও বিজ্ঞানভিত্তিক মাছ চাষের ক্ষেত্রে এখনও বেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে এই রাজ্য। এখানে এখনও জেলায় জেলায় পুরনো পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়। আর সেই কারণেই মাছের উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা মাঠে মারা যাচ্ছে। মাছ চাষে আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার কারণে ধাক্কা খাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও। বিশেষ করে মৎস্যজীবীরা সেভাবে আয়ের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। সেই ছবি বদলাতেই রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ব্লকে অন্তত ১০০ জন মৎস্যজীবীকে প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ২৮ হাজার চাষিকে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরুও হয়েছে। ৩ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা খরচে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। রাজ্যের মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, এই প্রশিক্ষণের সুফল মিলবে আগামী দু’বছরের মধ্যেই। তখন দক্ষিণ ভারতের প্রতি মাছ নির্ভরতা অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে জোর দেওয়া হবে মাছের রফতানিতেও।
মৎস্য দফতরে সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় জেলায় ব্লকে ব্লকে ওই সব প্রশিক্ষণ শিবিরগুলিতে রুই, কাতলা, মৃগেলের মতো কার্প জাতীয় মাছের পাশাপাশি জোর দেওয়া হচ্ছে শিঙ্গি-মাগুরের মতো মাছের চাষেও। নোনোজলের মাছ চাষকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আদিবাসী এলাকাগুলিতে জীবন জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে যাতে মাছ চাষ প্রাধান্য পায়, সেই লক্ষ্যে এগনো হচ্ছে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে চিংড়ি এবং কাঁকড়া চাষেও। রাজ্যের কোথায় কোথায় কত মানুষ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, তার পরিসংখ্যান নিজের কাজে রাখছে রাজ্য। এতে যেমন সরকারি পরিষেবা সরাসরি তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনই মৎস্যচাষিরাও রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পাবেন। ইতিমধ্যে রাজ্যে ৮ লক্ষ ২৭ হাজারের বেশি মানুষকে সেই শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।