সলমানকে হত্যার জন্যে ২৫ লক্ষ টাকা চুক্তি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের: পুলিশ চার্জশিট
নিজস্ব প্রতিনিধি: এত নিরাপত্তা, এত কড়াকড়ি, কিন্তু এতকিছু করেও রেহাই নেই! ১৪ এপ্রিল কাকভোরে বলিউড সুপারস্টার সলমান খানের বান্দ্রার বাড়ি গ্যালাক্সিতে ২ জন দুষ্কৃতী বাইকে চেপে এসে ৪-৫ রাউন্ড গুলি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালায়। এরপরেই অভিনেতার নিরাপত্তা আরও জোরদার করে মহারাষ্ট্র সরকার। তবে এই ঘটনা আজ নয়, গত ২ বছর ধরে চলে আসছে। কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নজরে রয়েছেন অভিনেতা বহুদিন ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হত্যার পরেই লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নজরে চলে আসেন সলমান খান। কারণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে কৃষ্ণসার দেবতা তুল্য। তাই তাকে হত্যার জন্যে অভিনেতাকে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অভিনেতা যতদিন ক্ষমা না চাইবেন, তাঁরা অভিনেতাকে হত্যার ছক কষেই যাবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন জেলবন্দি লরেন্স বিষ্ণোই। যাই হোক, সম্প্রতি সামনে এসেছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে লম্বা চার্জশিট।
সম্প্রতি সুপারস্টারের বাড়িতে ফায়ারিং মামলায় সলমান খান ও আরবাজ খানের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে মুম্বই পুলিশ। নতুন আপডেট অনুযায়ী, এবার পানভেল পুলিশ লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যদের বকরা লিউড সুপারস্টারকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিবরণ দিয়ে একটি চার্জশিট দাখিল করেছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ৩৫০ পৃষ্ঠার চার্জশিট গত সপ্তাহে পানভেল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে সলমান খানের ওপর গায়ক সিধু মুসেওয়ালার হত্যার মতো পরিকল্পিত হামলার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এবং সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে যে, কোনও সিনেমার শুটিংয়ের সময় বা সুপারস্টারের পানভেল খামারবাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং সুপারস্টারকে হত্যা করবেন। চার্জশিটে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্যের নাম রয়েছে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন, ধনঞ্জয় তাপসিং ওরফে অজয় কাশ্যপ (২৮), গৌতম বিনোদ ভাটিয়া (২৯), ভাস্পি মেহমুদ খান ওরফে চায়না (৩৬), রিজওয়ান হাসান ওরফে জাভেদ খান (২৫) এবং দীপক হাওয়াসিং ওরফে জন ওয়ালমিকি (২৫)। যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (আইপিসি ধারা 120 বি), প্ররোচনা (আইপিসি ধারা 115), এবং অপরাধমূলক ভয় দেখানোর (আইপিসি ধারা 506 (2)) অভিযোগ আনা হয়েছে৷
অভিযোগপত্রে আরও জানা গিয়েছে যে, অভিযুক্তরা পাকিস্তান থেকে AK 47, AK 92, এবং M-16 রাইফেল, সঙ্গে পঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত তুর্কি-নির্মিত জিগানা পিস্তল-সহ অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করছিল। এই অস্ত্রগুলি সলমান খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যবহারেরর জন্যে কেনা হয়েইল। এমনকী এও জানা গিয়েছে যে, বিষ্ণোই গ্যাং সলমান খানকে হত্যার জন্য ২৫ লাখ টাকার চুক্তির প্রস্তাব করেছিল। সলমানের প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল এবং শ্যুটাররা আনমোল বিষ্ণোই এবং গোল্ডি ব্রারের আদেশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন ব্যক্তির একটি নেটওয়ার্ক সলমন খানের প্রতিটি গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্য জড়িত ছিল। এই ব্যাপক নজরদারি মুম্বাইতে তার বাসভবন, তার পানভেল ফার্মহাউস এবং এমনকি গুরগাঁও ফিল্ম সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যেখানে তিনি প্রায়শই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য যেতেন।
আরও অভিযোগ, ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেদের হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। তারাই গোল্ডি ব্রার এবং আনমোল বিষ্ণোইয়ের আদেশের জন্য অপেক্ষা করছিল, এই গ্যাংয়ের মূল ব্যক্তিত্বরা উত্তর আমেরিকা থেকে কাজ করছে বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল, আক্রমণ শুরু করার জন্য৷ ১৪ এপ্রিল সলমান খানের হাউস ফায়ারিং মামলার পর থেকে, সলমানের নিরাপত্তার Y-প্লাসে উন্নীত করা হয়েছে। অভিনেতাকে একটি ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র বহন করারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে অভিনেতার সঙ্গে দেখা করেন এবং সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন। জানান, "সরকার আপনার সঙ্গে আছে। অভিযুক্ত দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা মামলার মূলে যাব। কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। কাউকে এভাবে টার্গেট করা উচিত নয়, কোনও গ্যাং বা গ্যাং ওয়ার হতে দেওয়া হবে না। আমরা এটা হতে দেব না। আমরা (লরেন্স) বিষ্ণোইকে শেষ করব।" এদিকে সলমান খানকে পরবর্তীতে সিকান্দার ছবিতে দেখা যাবে। এ আর মুরুগাদোস দ্বারা পরিচালিত, ছবিটিতে রশ্মিকা মান্দান্না, সুনীল শেট্টি এবং সত্যরাজ অভিনয় করেছেন। এটি ২০২৬ সালের ঈদে সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।